সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

সেলিনা হোসেন

বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম যেভাবে নিজেদের বিচার বিবেচনা নৈতিকতাকে কাজে না লাগিয়ে যে ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাতে শঙ্কা হচ্ছে। আজকে সময় এসেছে এক জোট হয়ে এসব জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, আমাদের প্রজন্মকে রক্ষা করার; যে প্রজন্ম আমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করবে।

আমরা যদি এটা করতে ব্যর্থ হই তাহলে বুঝতে হবে আমরা আমাদের অস্তিত্বই হারাতে যাচ্ছি। টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গতকাল এসব কথা বলেন তিনি। সেলিনা হোসেন বলেন, গুলশানের মতো এমন হামলার ঘটনা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত হয়ে আসছে। গুলশানে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের যে আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই— এমন কথা অস্বীকার করা যাবে না। তা ছাড়া আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, ওদের ছবিগুলো আগেই ছাপানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই বাস্তবতা কিন্তু রাতারাতি তৈরি হয়নি। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন সেই পাকিস্তান আমলে দেখেছি ইসলামী ছাত্র সংঘ। পরবর্তীতে সেই রাজনীতির রূপান্তর ঘটেছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান হয়েছে। তারা যে বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে তা মানবিকতার সম্পূর্ণ  বিপক্ষে। তারা ধর্মে সত্যিকারের মূল্যবোধের জায়গা থেকে ধর্মের সৎ উদ্দেশ্যটাকে অস্বীকার করে। আর তারা এটি করেছে নিজেদের ক্ষমতা ও নিজেদের আধিপত্য দখলের  জন্য। তিনি বলেন, এসব ঘটনা দেখে একটি প্রশ্ন চলেই আসছে যে আমাদের এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কতখানি অসাম্প্রদায়িক? তাদের মানবিক বোধটা কোথায়? যে মানুষকে নিয়ে তারা জীবনের কথা ভাববে, যে মানুষের জন্য চিন্তার জগৎ তৈরি করবে, যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের একাত্মতা অনুভব করবে সেটি তারা ভুলে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমাদের এই ছেলেমেয়েদের খেয়াল রাখতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই নিজেদের জায়গাটাকে বা নিজেদের অবস্থানকে আড়াল করতে না পারে। আমরা যদি একতরফাভাবে বলি এসব কিছু সরকারেরই দায়িত্ব, তাহলে সেটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে। কেননা সবার যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ’৭৫-পরবর্তী যে রাজনীতির পরিবর্তনটা তাই আজ এতদূর গড়িয়েছে। আজকের বাস্তবতা তারই ধারাবাহিকতা। আমরা যদি সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ধরে রাখতে পারতাম, যদি আমাদের সংবিধানকে নষ্ট না করতাম, যদি ইনডেনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর বিচারবহির্ভূত সংস্কৃতিকে ঢুকানোর প্রচেষ্টা না করতাম তাহলে আজ সামাজে এই পরিবর্তন আসত না। যে পরিবর্তন আজকের প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে। যে প্রজন্ম ভুল পথে নিজেদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। সেলিনা হোসেন বলেন, বিশ্বজুড়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তার রেশ আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট উন্নয়শীল রাষ্ট্রটির মধ্যেও প্রবেশ করেছে। বিষয়টি খুব উঁচু জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তিনি বলেন, আজকের পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত বা বিশ্বের অন্য দেশগুলো সহযোগিতার কথা বলছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের নিজস্ব অস্তিত্ব, জাতিসত্তার বিচারে এসব সহযোগিতা আমাদের পক্ষে থাকবে কিনা সেটা বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

সর্বশেষ খবর