বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

প্রতিদিন ডেস্ক

বাংলাদেশ বড় মাপের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গবেষকরা আভাস দিয়েছেন। তারা বলছেন, যে ভূ-গাঠনিক অবস্থানে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের একদল গবেষকের এই গবেষণার তথ্য গত সোমবার নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এরকম ভূমিকম্প হলে তা এ অঞ্চলের ১৪ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানাচ্ছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে— এমন কথা বলা না গেলেও দুটি গতিশীল ভূগাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে। গবেষক দলের প্রধান নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ওই ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সে পূর্বাভাস আরও গবেষণা না করে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের পূর্ব অংশ ও বাংলাদেশের যে অঞ্চল সম্ভাব্য সেই ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যার ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ বসবাস করছেন।

প্রতিবেদনের আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলে এ ধরনের একটি ভূমিকম্প মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ভূমিকম্প হলে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ভবন, ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ূন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গা তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। এই গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে। এমন মাত্রার ভূমিকম্প হলে তার ক্ষয়ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ হবে যে— বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। গবেষকরা দশ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক  প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা টেকটোনিক প্লেটের ওই সরে যাওয়া জিপিএসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করছেন ২০০৩ সাল থেকে। সেই তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ঠেলছে। দুই প্লেটের সংযোগ স্থলে ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে অন্তত ৪০০ বছর ধরে। ওই শক্তি একসঙ্গে মুক্তি পেলে তা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর