শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
আসেম শীর্ষ সম্মেলন শুরু

যোগাযোগের কৌশলগত সুযোগ কাজে লাগাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেদভেদেভ ও জাপান প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক

প্রতিদিন ডেস্ক

যোগাযোগের কৌশলগত সুযোগ কাজে লাগাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

মঙ্গোলিয়া সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ

১১তম এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলন (আসেম ১১) গতকাল সকালে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোরে শুরু হয়েছে। ‘আসেম’-এর ২০ বছর : কানেকটিভিটির মাধ্যমে ভবিষ্যতের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে স্থানীয় হোটেল সাংগ্রিলাতে এই সম্মেলনে ইউরোপীয় ও এশীয় ৫১টি দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধনী  অধিবেশনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে আসেন। আসেম ভিলা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট সাখিয়াজিন এলবেগদোর্জ তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রেসিডেন্ট এলবেগদোর্জ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। খবর বাসসের।

দুই দিনের এ সম্মেলনে ১১টি দেশের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৩টি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ১৬ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট অংশ নিচ্ছেন।

আসেম সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে,  ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি ও সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জন স্কনেইদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল আসেম শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় প্লেনারি অধিবেশনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য সব দেশ ও সমাজের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, যোগাযোগের কৌশলগত সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যোগাযোগ এখন আর কোনো একক দেশের বিষয় নয়। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সবার জন্য কৌশলগত সম্ভাবনা ও সুযোগে পরিণত হয়েছে। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে যোগাযোগ কাঠামোর রূপরেখা কী হবে তা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আজ আসেমের দেশগুলো নতুন প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র ও সংযোগস্থলে পরিণত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের পরিচিত বাণিজ্য ও শিল্প অংশীদাররা এখন নতুনদের জন্য পথ করে দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে উৎপাদন ও সেবা খাতে ধারাবাহিক ও দায়িত্বশীল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠছে এবং পারস্পরিক আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপনাও (সাপ্লাইচেইন) সম্প্রসারিত হচ্ছে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বহুমুখী যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল (বিবিআইএন) এবং বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর (বিসিআইএম-ইসি) অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। যোগাযোগ  তৈরিতে বিপুল সুযোগ সৃষ্টি হয়ে জনগণের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন ঘটবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আজ আসেমের অবকাশকালীন বৈঠকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়, বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন এবং অভিবাসন নিয়ে আলোচনা হবে এবং উলানবাটোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে আসেম সম্মেলন শেষ হবে। সফর শেষে আজ রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। এদিকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে থাকার সংকল্প ও সংহতি প্রকাশ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বাংলাদেশে চলমান প্রকল্পগুলোতে সরকারি উন্নয়ন সহযোগিতা এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন তিনি। গতকাল মঙ্গোলিয়ার রাজধানীর উলানবাটোরের আসেম সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন।  বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। বৈঠকে শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার শিকড় খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ইহসানুল করিম বলেন, গুলশান হামলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি দেখানোর জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

মেদভেদেভ ও সিলভেরির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক : এদিকে বাংলা নিউজ জানায়, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনটিলনি সিলভেরির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র সচিব জানান, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। দুই নেতা বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের সফল অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার এবং প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপশক্তি মোকাবিলা করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস নির্মূলে সরকার ও কমিউনিটি পর্যায়ে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দ্রুত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন ইতালির মন্ত্রী।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ইতালির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অনেক বাংলাদেশি ইতালিতে বাস করছেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়নের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব বিদ্যমান।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, গুলশানের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী আসেম সম্মেলনের ফাঁকে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ইয়োহান স্নেইডার আম্মানসহ অন্য নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর