মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
মানবতাবিরোধী অপরাধ

জামালপুরের তিনজনের ফাঁসি পাঁচজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামালপুরের তিনজনের ফাঁসি পাঁচজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামালপুরের মো. আশরাফ হোসেনসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো.  সোহরাওয়ারদী।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুজন হলেন- মো. আবদুল মান্নান ও  মো. আবদুল বারী। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে সরকার। এছাড়া আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’, এস এম ইউসুফ আলী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন,  মো. আবুল হাশেম ও মো. হারুন। প্রসিকিউশন এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামিপক্ষ বলেছে রায়ে তারা অসন্তুষ্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মো. শামসুল হক ও ইউসুফ আলীর আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম। এই দুই আসামিকে রায়ের সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়। অন্য আসামিরা পলাতক। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ ও তাপস কান্তি বল এ মামলা পরিচালনা করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম ও সৈয়দ মিজানুর রহমান, পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৫তম মামলার রায়। এ মামলার আসামিরা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীতে যোগ দেন। জানা যায়, প্রথম অভিযোগ থেকে আসামি শামসুল হক ও ইউসুফ আলী খালাস পেয়েছেন। এই অভিযোগে অন্য ছয়জন আসামি ছিলেন না। দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার মইষ ভাদুরিয়া ও ধূপদহ গ্রামে অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। এ অভিযোগে আসামি শরীফ ও হারুনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আশরাফ, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই রাত ৩টার দিকে জামালপুরের সি অ্যান্ড বি রোডের (পুরাতন) দয়াময়ী লেনের মল্লিক ভিলা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ নুরুল আমীনকে অপহরণের পর হত্যা। এই অভিযোগে হারুন ছাড়া সবাই আসামি। এই অভিযোগে আশরাফ, মান্নান, বারী, শামসুল হক, ইউসুফ, শরীফ ও হাশেমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগ, জামালপুরের আশেক মাহমুদ ডিগ্রি কলেজকে নির্যাতন কেন্দ্র বানিয়ে ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে বহু মানুষকে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করে। এই অভিযোগে শরীফ, আশরাফ, আবদুল মান্নান ও আবদুল বারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম অভিযোগে সবাই আসামি হলেও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৯ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। গত বছর ২৬ অক্টোবর বিচার শুরু হয়। এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুট ও গুমসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

সর্বশেষ খবর