শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক দলের অফিস বন্ধ হচ্ছে গুলশান বনানীতে

নিজামুল হক বিপুল

রাজনৈতিক দলের অফিস বন্ধ হচ্ছে গুলশান বনানীতে

গুলশানে খালেদা জিয়া ও বনানীতে এরশাদের অফিস। ওই এলাকায় এছাড়াও রয়েছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গুলশান থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলের কার্যালয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টিসহ সব কার্যালয় উচ্ছেদ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর এখন গুলশানকে জঞ্জালমুক্ত করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। বিশেষ করে গুলশানের কূটনৈতিকপাড়াকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে আসতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সরাসরি রাজনৈতিক কার্যালয় উচ্ছেদের কথা না বলে রাজউক বলছে, গুলশানের মতো স্পর্শকাতর আবাসিক এলাকায় যেসব অনাবাসিক অফিস-প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। এ জন্য এরই মধ্যে সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৫ জুলাই গুলশান এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে রাজউক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১ জুলাই সন্ধ্যার পর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর রোডে অবস্থিত হোটেল হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে। একই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন পুলিশের দুজন কর্মকর্তা। হামলাকারী ছয় তরুণও নিহত হন উদ্ধার অভিযানের সময়। এ ঘটনার পর সারা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার, বিশেষ করে বিদেশি দূতাবাস অধ্যুষিত গুলশানের নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি তত্পর হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো। সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের পরও টানা তিন মাস তিনি ওই কার্যালয়ে অবস্থান নেন। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোট সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াওসহ ব্যাপক সহিংসতা চালায়। খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা অবস্থায় এমন সহিংসতার ঘটনায় তখন গুলশান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া কিংবা উচ্ছেদ করার কথা বিভিন্ন পর্যায় থেকে উঠেছিল। কিন্তু জ্বালা-পোড়াও আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রায় ৯৩ দিনের মাথায় বেগম খালেদা জিয়া কার্যালয় ছেড়ে গুলশানের বাসায় ফিরে যাওয়ার পর গুলশান থেকে রাজনৈতিক কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া বা উচ্ছেদ করার বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান এলাকায় থাকা সব রাজনৈতিক দলের কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া এবং সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গুলশান এমনিতেই একটি স্পর্শকাতর এলাকা। তার ওপর ওই এলাকায় বিদেশি দূতাবাসগুলো অবস্থিত। কূটনৈতিকপাড়া হিসেবে গুলশানের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জানান, কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তার স্বার্থেই গুলশানের ওই এলাকাকে সব রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা থেকে মুক্ত রাখার জন্য বলেছি। একই সঙ্গে গুলশান এলাকায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য বলেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, গুলশানে যেসব রাজনৈতিক দলের কার্যালয় রয়েছে সেগুলো সরানোর দায়িত্ব গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের। তারা যখনই উদ্যোগ নেবে বা আমাদের বলবে- তখনই আমরা সেগুলো সরিয়ে দেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গতকাল বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক কার্যালয় নয়, গুলশানের মতো আবাসিক এলাকা থেকে সব ধরনের অফিস সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। যদি সরিয়ে না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা সেগুলো উচ্ছেদ করব।’ তিনি বলেন, ‘গুলশানের মতো স্পর্শকাতর আবাসিক এলাকায় রাজনৈতিক দলের কার্যালয় তো নয়ই, কোনোরকম অফিসই থাকা উচিত নয়। এরই মধ্যে অনেককে নোটিস দেওয়া হয়েছে তাদের অফিস সরিয়ে নেওয়ার জন্য।’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে অবৈধ স্থাপনার তালিকা করেছি। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ও অফিসকে নোটিসও দিয়েছি। গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছি। আমরা আবাসিক এলাকায় কোনো অনাবাসিক স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান রাখব না। যারা নিজেরা না সরে যাবে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।’ আগামী ২৪ জুলাই থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘২৫ জুলাই আমরা গুলশানে উচ্ছেদ অভিযান চালাব। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে।’ জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর গুলশান আবাসিক এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়, বনানীতে জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ছোট-বড় কার্যালয় এবং এস এম আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) কার্যালয় রয়েছে। অভিযান শুরু হলে এসব কার্যালয় উচ্ছেদ করা হবে।

সর্বশেষ খবর