রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক কাতারে সবাই

রাজনৈতিক দল সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ঐক্যবদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার সবাই। দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং ধমীয় সংগঠনও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা যার যার প্লাটফর্ম থেকে কথা বলছে। মসজিদগুলোতেও খুতবায় তুলে ধরা হচ্ছে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের অনিষ্টকর বিষয়গুলো। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ আর মানববন্ধনের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে চলেছে। প্রয়োজন এখন সরকারকে সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিকে নিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা। এ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ না করলে উগ্রপন্থীরা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে দেশের রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যারা জাতীয় ঐক্য চায়, তারা কী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য চাইছে, নাকি জনগণের ঐক্য? এটা আগে বুঝতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের ঐক্য দরকার। কারণ জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণ ঐক্যবদ্ধ না হলে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা হবে না। ইতিমধ্যে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’ আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য খালেদার সঙ্গে নয়, ঐক্য হবে দেশের জনগণের সঙ্গে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা হবে। তবে গুলশানের ঘটনার পর খালেদা জিয়া সরকারের পদত্যাগ চেয়ে প্রতিক্রিয়া বক্তব্য করেছেন। এতে করে তিনি জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছেন। জঙ্গিরা উৎসাহিত হয়েছে। আমরা কঠোর হস্তে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমন করছি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।’ জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাস দমনে সরকারের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছি জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য। আশা করছি, শেখ হাসিনা সেটি মানবেন এবং সে পথ বেয়েই বাংলাদেশে বর্তমানের অশুভ শক্তির চির-অবসান ঘটবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশি উদ্বিগ্ন। দেশে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যে জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা। তবে একটি অভয় দিতে পারি—চিন্তার কোনো কারণ নেই। উদ্বেগের প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে সক্ষম হবেনই। আমরা তার সঙ্গে আছি, সব সময় পাশেই থাকব।’ দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে উঠলেও দেশে সরকারের সংকীর্ণতার কারণে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠছে না। তিনি বলেন, সরকারের সংকীর্ণতা ও দেশে গণতন্ত্রহীনতার কারণে সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী সুযোগ গ্রহণ করছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তাই দেশ রক্ষার স্বার্থে সবাইকে ঐক্য গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করতে হবে।’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ‘বিএনপি আগাগোড়াই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এ লক্ষ্যে ঐক্য গড়তে চেয়ারপারসন আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার এতে সাড়া দিলে ওয়েলকাম। না দিলেও বিএনপি পৃথকভাবে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় ঐক্য হয়েছে। কোথায় ঐক্য হলো আমরা জানলাম না। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্য চাই। সরকারকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসলে ভালো।’ জঙ্গিবাদ ইস্যুতে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আজকে আমরা যখন দেখি, রাজনীতির নামে অনেক খেলা চলে। সরকারি রাজনীতি, বিরোধী রাজনীতি, অন্যান্য ছোট দল, শুধু ঐক্যের কথা বলে। কিন্তু কেউ বলে না, এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি; জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমি এভাবে কাজ করব। আপনি আপনার কর্মসূচি জানান। জঙ্গিবাদের উত্থান রোধে আপনার ভূমিকা নাগরিক সমাজকে, মানুষকে জানান। তাহলে হয়তো আমরা একটা পদক্ষেপের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাব।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আজকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে নৃশংসতা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি মনে করি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার জন্য সরকার আছে। তারাই প্রতিরোধ করবে। আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। দায়িত্ব হলো, আমাদের সন্তানদের হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতির মানবিক ও অসাম্প্রদায়িকতার আলোকে শিক্ষা দেওয়া। এর পাশাপাশি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে? এর বিরুদ্ধে সবাইকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি। এটা সম্মিলিতভাবে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে একটি সেল গঠন করা যেতে পারে। যারা দেশ ও ধর্মকে ভালোবাসেন, তারা সবাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। সরকারের পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৪ দলের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে।’

ইসলামী ঐক্যজোটের আরেকাংশের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘ইসলাম সব সময় সন্ত্রাস-নৈরাজ্যসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আমরা যারা বাংলাদেশে ইসলামী শক্তি আছি, তারা অতীতেও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচিতে সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। ভবিষ্যতেও থাকব। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর