রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস দমনে বিশ্ববাসী আমাদের সঙ্গে আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘শুধু দেশের জনগণই নয়, পুরো বিশ্বই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের পাশে আছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী ছাড়াও তাদের মদদদাতা, অর্থ ও অস্ত্রদাতা, উসকানিদাতাসহ সবার শিকড় সন্ধানে নেমেছি। সবাইকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। জনগণের শক্তি দিয়েই আমরা দেশ থেকে  জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করব। দেশে কোনো অন্ধকার থাকবে না, আমাদের আলোর পথে যাত্রা অব্যাহত থাকবে। কোনো শক্তিই তা রুখতে পারবে না।’ গত রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দেশের জনগণই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে হবে, সর্বত্র সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সব বাহিনীর সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের মূল শিকড় কোথায়, কারা অর্থ, অস্ত্র ও উসকানি দিচ্ছে, নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী কারা, কারা এভাবে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করার জন্য তরুণদের বিপথে চালিত করছে তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। সবাইকে খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করবই। কেউই রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বৈঠকে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর শোকাবহ আগস্ট পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলা দিবস, ২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন যথাযোগ্যভাবে পালনে দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এ ছাড়া দলের আসন্ন জাতীয় ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল সফল করার ব্যাপারেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সূচনা বক্তব্যে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনেকেই ভেবেছিল গুলশানের হামলার পর সারা বিশ্বে বাংলাদেশ হেয় প্রতিপন্ন হবে, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। কিন্তু হামলার পর বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান আমাকে মেসেজ দিয়ে বা চিঠি দিয়ে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী আমাদের লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এত দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন চালিয়ে হামলাকারীদের দমন করে ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি মনিটরিংয়ের নির্দেশ : প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দলের জাতীয় কাউন্সিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যতই বাধা-বিপত্তি আসুক, নির্ধারিত সময়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল হবে। এ জন্য গঠনতন্ত্র ঘোষণাপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা। একই সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে তৃণমূলে কমিটি গঠন দ্রুত সম্পন্ন এবং সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এ কমিটি হবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে। সেখানে যেন আওয়ামী লীগকে প্রাধান্য দেওয়া না হয়। এলাকার সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিকে সভাপতি বা আহ্বায়ক করতে হবে। এতে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও চলবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন জামায়াত-শিবিরের লোকজন এখানে ঢুকে না পড়ে। বৈঠকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। খুলনা মহানগর ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটি নিয়ে আপত্তি থাকায় অনুমোদন করা হয়নি বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান।

জনপ্রশাসন পুরস্কার প্রদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি মাথায় রেখে কাজ করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো মূল্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করে জনজীবনে শান্তি-নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা হবে। এ দেশের মাটিতে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা হতে দেব না।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ প্রদানে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জনপ্রশাসন পদক-২০১৬’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। পরে তিনি পদক প্রদান করেন। এ সময় জনপ্রশাসন পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট সোনার পদক, ১ লাখ টাকা (জাতীয় পর্যায়ে দলগত ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত), ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

যারা পদক পেলেন : ব্যক্তিগত শ্রেণিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রমে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন বিসিএস (প্রশাসন) একাডেমির উপ-পরিচালক রহিমা খাতুন। একই শ্রেণিতে ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’ সফটওয়্যার উদ্ভাবন ও পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পদক পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। দলগত শ্রেণিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেবাসমূহ কম খরচে, কম সময়ে ভোগান্তিহীনভাবে জনগণকে প্রদানের উদ্দেশ্যে সফটওয়্যার তৈরি, ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ ও যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বাস্তবায়নের জন্য পাঁচজনকে জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা হয়েছে। এরা হলেন দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম—এটুআইর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান (সাবেক জেলা প্রশাসক, যশোর), সদস্য হিসেবে পদক পেয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাহিদ হোসেন পনির (সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, শিক্ষা ও আইসিটি, যশোর), বিসিএস প্রশাসন একাডেমির সহকারী পরিচালক জি এম সরফরাজ (সাবেক সহকারী কমিশনার, আইসিটি, যশোর), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব তন্ময় মজুমদার (সাবেক সহকারী কমিশনার, আইসিটি, যশোর) ও যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী প্রোগ্রামার মোতাহার হোসেন। উদ্ভাবনী প্রয়াসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ‘রেডিও নারায়ণগঞ্জ’ প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য দলগতভাবে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন দলনেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, সদস্য হিসেবে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম, সহকারী কমিশনার জয়া মারীয়া পেরেরা ও সহকারী কমিশনার ফারহানা আফসানা চৌধুরী। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসারে অবদান রাখায় অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন—এটুআই প্রোগ্রাম এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়াধীন গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে। ব্যক্তিগত শ্রেণিতে জেলা পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা সমবায় অফিসার মামুন কবীর, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব কুমার সরকার, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, সওজের যুগ্ম-সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার, ‘ম্যাস রাপিড ট্রানজিট’ প্রকল্পের সমন্বয়ক মো. এনামুল হক, ফেনী ফ্যামিলি প্লানিং অধিদফতরের উপ-পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ফেনী সদরের ইউএনও পি কে এম এনামুল করিম, ফেনী সদরের লেমুয়া ইউনিয়নের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. রবীন্দ্রনাথ দত্ত, ফেনীর চুনুয়া ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক পরিদর্শক মীর আজম হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহমেদ, এডিসি রেভিনিউ রংপুর মোস্তাইন বিল্লাহ, এডিসি রেভিনিউ শেরপুর এ টি এম জিয়াউল ইসলাম, দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জের ইউএনও মো. রাশেদুল ইসলাম ও রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম গোলাম কিবরিয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর