রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মাইলফলক

আইনজীবীদের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার সাম্প্রতিক সব রায়ই এর প্রমাণ। এতেই প্রমাণিত হয় দেশে আইনের শাসন কত শক্তিশালী পর্যায়ে এবং আইনের  কাছে সবাই সমান। এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করে আইনজীবীরা বলছেন, দেশের মানুষও বিচার বিভাগের এই রূপই দেখতে চায়। মানুষ আশা করে, ভবিষ্যতেও বিচার বিভাগের কার্যকলাপের এ ধারা জোরালোভাবে অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় সর্বশেষ ২১ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড করেছে হাইকোর্ট। এর আগে আদালত অবমাননায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক। আর রিভিউ খারিজের ফলে দুর্নীতির মামলায় ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের সাজা আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী লায়েকুজ্জামান মোল্লা বলেন, ‘সরকার ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালতে যে সাজা হচ্ছে, তাতে এটাই প্রমাণ করে যে, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। একই সঙ্গে সরকার চাপ প্রয়োগ করে এটা করছে, তা প্রমাণ করে না। দেশে আইনের শাসন যে কতটা শক্তিশালী অবস্থানে, এসব মামলার রায়ই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এসব রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে মাইলফলকের ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আদালতের কাছ থেকে মানুষ এ ভূমিকাই আশা করে। দেশের মানুষের কাছে এখন এটাও প্রমাণিত হলো যে, আইন সবার ঊর্ধ্বে। তবে এটা নিয়ে বিএনপি যে কথাবার্তা বলছে বা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা অবান্তর ও বিতর্কিত। আদালত অবমাননামূলক।’ এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাজনীতিবিদরা রাজনীতির অবয়বে প্রায় সব সময়ই দায়দায়িত্ব ও অপরাধের বোঝা থেকে নিজেদের মুক্ত করে রাখেন। মন্ত্রী এবং রাজনীতিবিদদের বিষয়ে আদালতের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর ফলে কেউই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয় তা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি সুখকর বার্তা। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি বা অন্য অপরাধের দায়ে রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত হওয়া বা দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া আমাদের গোটা রাজনীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে, যা বর্তমানে রাজনীতির বিবর্ণ চেহারাকেই তুলে ধরছে। ফলে মানুষ রাজনীতিবিদদের ওপর থেকে শ্রদ্ধা ও আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বড় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিসহ প্রভাবশালীরা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এ বার্তাই বহন করছে। এ ধারা জোরালোভাবে অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করি। বিচার বিভাগের কাছ থেকে মানুষ এ ভূমিকাই আশা করে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সরকারি ও বিরোধী দল নির্বিশেষ সব দলের অভিযুক্তদেরই সাজা হচ্ছে। এটি প্রকৃতপক্ষেই আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত বহন করছে। বিচার বিভাগ যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, এটা তারই প্রমাণ। বিষয়টি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এ এম আমিনউদ্দিন বলেন, ‘আদালতের কাজ হচ্ছে বিচার করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ব্যক্তিকে না দেখে বরং মামলা দেখে, মামলার গুণাগুণ দেখে বিচার করা। সাম্প্রতিক বিভিন্ন মামলার রায়ের প্রেক্ষাপটে এটা বলা যায়, বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবেই কাজ করছে। বিচার বিভাগের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

সর্বশেষ খবর