মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করলে যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করলে যাবজ্জীবন

কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মীমাংসিত কোনো বিষয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রচারণা প্রপাগান্ডা চালায় বা তাতে মদদ দেয়, জাতির পিতার অবমাননা করে তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৬ এর খসড়া প্রাথমিকভাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা আইনের খসড়াটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে দায়িত্ব দিয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত  মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরও একাধিক আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার ধারা ১৫ এর উপধারা ৫-এ বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত থেকে মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিষয়াবলি বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যে কোনো প্রচার- প্রপাগান্ডা চালালে বা তাতে মমদ দিলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শফিউল আলম বলেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে সাইবার আক্রমণ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কম্পিউটার, মোবাইলসহ অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে জালিয়াতি, কম্পিউটার বা মোবাইলে প্রতারণা ও হুমকি প্রদান করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ব্যক্তির পরিচয় বা ছদ্দবেশ ধারণ করে বা অন্যের তথ্য নিজের ব্যক্তিগত বলে দেখায় তাহলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধন রাখা হয়েছে। তিরি আরও জানান, এই আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার প্রধান থাকবেন একজন মহাপরিচালক। যিনি জরুরি পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যে কোনো সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইনের খসড়ার ধারা ১৫-তে সাইবার সন্ত্রাসের বিষয়ে বলা হয়েছে, কেউ যদি বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কোনো বিষয়, অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে বা সম্পদ বিনষ্ট করে এমন কোনো বিষয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, সহায়তা করে বা প্ররোচিত করে, সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরী পরিস্থিতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে নাই এমন কোনো বেসামরিক ব্যক্তি, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদির নেটওয়ার্কের মারাত্মক ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু করলে সাইবার সন্ত্রাসের আওতায় পড়বে। এ জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে অন্য কারও ব্যক্তিগত ছবি তোলা, প্রকাশ বা বিকৃতি ঘটালে বা ধারণ করলে ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের’ অপরাধ সাইবার সন্ত্রাস হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনের ১৮ ধারায় পর্নোগ্রাফির জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছর এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে শত্রুতা সৃষ্টি বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো যদি কোনো কাজ ওয়েবসাইট বা অন্যকোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় করা হয় তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছর, সর্বনিম্ন এক বছর এবং সাত লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে মানহানি, মিথ্যা-অশ্লীল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত— এ জাতীয় কোনো অপরাধ ইলেকট্রনিক বা অন্য কোনো মাধ্যমে ঘটালে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর, সর্বনিম্ন দুই মাস, দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা ওই আইন থেকে বাদ পড়বে। নতুন আইনে চলে আসবে। তবে আইসিটি আইনে ইতিমধ্যে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ওই আইন অনুযায়ী চলবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বর্তমানে আইসিটি আইনে যেসব ধারা আছে সেগুলো অপূর্ণাঙ্গ ও অপর্যাপ্ত। এ কারণেই একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করতেই নতুন আইন করা হচ্ছে। শফিউল আলম জানান, বৈঠকে দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর বিধি-নিষেধের সময় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর নতুন বিধি-নিষেধের মেয়াদ গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৬, বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৬ এবং খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০১৬-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর