বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জবরদখলের মচ্ছব ৩০০ ফুট সড়কে

পজেশন কেনাবেচা মাসোয়ারা চাঁদাবাজি চলছেই

সাঈদুর রহমান রিমন

জবরদখলের মচ্ছব ৩০০ ফুট সড়কে

৩০০ ফুট সড়কে দোকানপাট স্থাপনা বসিয়ে দখল করা হয়েছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আবারও জবরদখল হতে বসেছে কুড়িল-কাঞ্চন ব্রিজগামী ৩০০ ফুট সড়ক। দোকানপাট বানিয়ে, ক্লাব গড়ে তুলে, বাড়িঘরের সীমানা বাড়িয়ে দখল করা হচ্ছে সড়কের জায়গা। ইদানীং নার্সারির নামে গোটা সড়কটাই গিলে খাওয়ার বাণিজ্য চলছে। যারা যেভাবে পারছে সেভাবেই রাজধানীর নতুন গেটওয়েটি জবরদখল করে নিচ্ছে। সাইনবোর্ড সর্বস্ব ভুঁইফোড় সংগঠনের নামে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ   এ সড়কের সিংহ ভাগ জায়গা জবরদখল করে নিয়েছেন। এখন রাস্তার জায়গা পজেশন আকারে বিক্রি করে হাটবাজার গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘তিনশ’ ফুট বাজার’-বরাদ্দ চলছে পজেশন হস্তান্তরের। থানা পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা মাসোহারা পাওয়ায় তিনশ’ ফুটের দখলবাজি থামানো যাচ্ছে না। এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় তিনশ’ ফুট রাস্তায় দখলের উৎসব শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাজউক ও ডিসিসি একযোগে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। বেশ কিছুদিন দখলের ধকলমুক্ত থাকলেও কয়েক মাস ধরে দ্বিগুণ উৎসাহে আবারও রাস্তা দখলের মচ্ছব চলছে। কুড়িল ফ্লাইওভার প্রান্ত থেকে কাঞ্চন ব্রিজমুখী শুরু হওয়া তিনশ’ ফুট সড়কের অনেক স্থান ইতিমধ্যেই হাট-বাজারে পরিণত হয়েছে। ফ্লাইওভারের প্রান্তেই সড়কটির অন্তত দুটি লেন দখল করা হয়েছে। সেখানে একটি লেনের একাংশ দখল করে বানিয়ে নেওয়া হয়েছে বাড়িঘর, পাকা ভবন। মোড়সংলগ্ন অন্তত ৩০টি বাড়ির সীমানা বাড়িয়ে রাস্তা দখল করে নতুন ঘর-বারান্দা কিংবা নিজস্ব সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘিরে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গড়ে উঠেছে দোকানপাট, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ। মূল সড়কের ওপরই চলে ওয়ার্কশপের গাড়ি মেরামত। সেখানে আসা সারি সারি গাড়ি রাখা হচ্ছে ব্যস্ততম রাস্তাজুড়ে। রাস্তার আরেকটি লেন দখল করে স্থায়ী বাণিজ্য ফেঁদে বসেছে নার্সারি ব্যবসায়ীরা। রাস্তার পুরোটাই সারি সারি গাছ, চারা আর ঝোপঝাড়ে প্রায় ঢেকে ফেলা হয়েছে। সরকারি রাস্তার জায়গায় কে দিয়েছে নার্সারি ব্যবসার অনুমতি সে প্রশ্নের কোনো জবাব নেই। নার্সারি ব্যবসায় নিয়োজিত কর্মচারীরা বলেন, ঘাটে ঘাটে মাসোহারা দিয়েই নার্সারির বাণিজ্য সচল রাখা হয়েছে। চারলেনবিশিষ্ট তিনশ’ ফুট সড়কের দুটি লেনই জবরদখল হতে চলেছে। ঝুপড়ি বস্তি স্টাইলে কিছু বাড়িঘরও নির্মিত হয়েছে। নির্মাণাধীন আছে কয়েকশ’ বাড়ি। চলছে কোনো কোনো বাড়ি ও দোকান পাকা করার কাজও। সেখানে বিভিন্ন সংগঠনের নামে রাস্তার জায়গা রীতিমতো পজেশন আকারে কেনাবেচা পর্যন্ত চলছে। শুধু সড়কের জায়গা দখল করতেই নামের আগে-পিছে ‘লীগ’ আর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠন খুলে বসেছে কেউ কেউ। সড়কটির তালবাড়ী এলাকায় কয়েকশ’ দোকানপাটের বড়সড়ো বাজার বসানো হয়েছে। রীতিমতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে স্থায়ী ভিতের বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছে সেখানে। তিনশ’ ফুট সড়ক দখলবাজির ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ নির্মাণের কৌশলও শুরু করেছে দখলবাজরা। সড়কের জায়গায় মসজিদ গড়ে তুলে তা ঘিরেই দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে। অবৈধ দখলবাজদের কাছ থেকে থানা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের নামেও লক্ষাধিক টাকা মাসোহারা আদায় হয় বলে জানা গেছে। স্থায়ী-অস্থায়ী শত শত দোকানের পসরায় দুটি সড়কের প্রবেশমুখই ‘ভিড়-ভাড়াক্কার হাট-বাজারে’ পরিণত হয়েছে। এসব বাজার, দোকান, স্ট্যান্ডের জটলা এড়িয়ে এঁকেবেঁকে যানবাহন চলাচল করতে গিয়েই বেধে যাচ্ছে যানজট। তিনশ’ ফুট রাস্তায় দোকানপাটের পসরা সাজিয়ে বসা খুদে দোকানিরা জানান, প্রতিদিন ‘পুলিশের বিট’ বাবদ ২০ টাকা, ‘হকার সংগঠনের চাঁদা’ বাবদ ১৫ টাকা এবং স্থানীয় ক্লাব-সমিতির নামে ‘মাস্তানি ভাতা’ বাবদ আরও ৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার জন্য একজন করে দোকানদার ‘লাইনম্যান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া সাপ্তাহিক হারে কমিশন পান রাজউক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। দখলবাজ চাঁদা আদায়কারীদের কবল থেকে ভ্রাম্যমাণ হকাররা পর্যন্ত রেহাই পান না। ঘুরে ঘুরে ডিম, মুড়িভাজা, পান-সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকেও ২০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হচ্ছে। ভ্যানের ওপর দোকানের পসরা সাজিয়ে বসা হকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে। অন্যদিকে রাস্তায় শাল বল্লির ঠোঁট ঠেকিয়ে সংলগ্ন খালের পানিতে খুঁটি পুতে গড়ে তোলা অস্থায়ী দোকান থেকে আদায় হচ্ছে সাপ্তাহিক চাঁদা। ওসির গাড়িচালক পরিচয়ে এক পুলিশ কনস্টেবল এসব দোকান থেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা করে বখরা নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর