বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিতু হত্যা এখনো রহস্যে, অব্যাহতি এসপি বাবুলকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিতু হত্যা এখনো রহস্যে, অব্যাহতি এসপি বাবুলকে

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচিত না হলেও চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে। গতকাল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ  অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার এই অব্যাহতির আদেশ পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৪তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগ দেওয়া মো. বাবুল আক্তার (বিপি-৭৫০৫১০৯০২৯), অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সিএমপি, চট্টগ্রাম (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এবং পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত)-কে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি (পুলিশ ক্যাডার) হতে এতদ্বারা অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এসপি বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার যুদ্ধে জিতেছে। কিন্তু কত দূর জিতবে জানি না। সরকার সরকারের কাজ করেছে। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ তিনি বলেন, তাকে অব্যাহতি দেওয়া মানে তার জীবনের ওপর হুমকি, তার দুই সন্তানের ওপর হুমকি। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার ঘটনায় ২৪ জুন পুলিশ সদর দফতরে বিশেষ পরিস্থিতিতে পদত্যাগপত্র জমা দেন বাবুল। তবে সে সময় বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হলেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। এরপর দীর্ঘ ছুটি শেষে বাবুল পুলিশ সদর দফতরে এলেও চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে কাজে যোগদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন এসপি বাবুল। যেখানে তিনি বলেন, Duties resume (দায়িত্বে পুনর্বহাল) করতে চাই। তখন পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ায় তার চাকরিতে যোগদানের সুযোগ নেই। এরপর তিনি চাকরি ফিরে পেতে ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, ‘২৪ জুন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে, বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়।’ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পদোন্নতি পাওয়ার পর তাকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। কয়েক দিনের মাথায় ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। আলোচিত এ খুনের তিন মাস পূর্ণ হলেও এখনো পুলিশ নিশ্চিত করছে না, কী কারণে খুন হয়েছেন মিতু। জানাতে পারছে না খুনের হোতা, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী কে বা কারা। পুলিশ কিলার ভাড়া করা কামরুল ইসলাম ওরফে মুছা সিকদারকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে এ কথা বলেই থেমে আছে। যদিও পুলিশের দাবি, মুছাকে গ্রেফতার করা গেলেই উন্মোচিত হবে হত্যারহস্য। কিন্তু মুছার পরিবার বলছে, মুছাকে পুলিশই আটকে রেখেছে। অথচ এ কথা পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করছে না। এ অবস্থায় রহস্য উন্মোচন হওয়ার বদলে কেবলই জট পাকাচ্ছে। এ ঘটনার পর পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করে। এ ছাড়া ৫ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নবী। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া মুছা ও কালু এখনো পুলিশি খাতায় পলাতক। এ ঘটনার পর ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ায় শ্বশুরের বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আবার শ্বশুরের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এর পর থেকে প্রায় দেড় মাস বাবুল অফিসে যাননি। ৩ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গেলেও তিনি কাজে যোগ দেননি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী বাবুল দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় এসে তার শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

সর্বশেষ খবর