শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছয় দিনের ছুটির ফাঁদে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল আজহায় টানা ছয় দিনের ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে দেশ। আজ শুক্রবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত টানা ছয় দিনের সরকারি ছুটি। এরপর বৃহস্পতিবার একদিনের কর্মদিবস শেষে আবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। আজ ও কাল সাপ্তাহিক, আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাবলে ছুটি এবং সোম, মঙ্গল ও বুধবার পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি। সব মিলিয়ে ছয় দিনের সরকারি ছুটিতে দেশ। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে যথারিতি সচিবালয়, আদালত, ব্যাংক, বীমাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। তবে যারা বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছেন তারা টানা নয় দিনের ছুটি উপভোগ করবেন।

দুপুরের মধ্যেই ফাঁকা সচিবালয় : সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে গতকাল দুপুরেই ফাঁকা হতে শুরু করে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। ঈদুল আজহার ঈদ উদযাপন করতে তিন দিন ছুটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে আগামী রবিবার ছুটি ঘোষণা করায় গতকাল দুপুর থেকেই সচিবালয়ে শুরু হয় ছুটির আমেজ। শেষ কর্মদিবসে সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ মন্ত্রণালয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতির হার একেবারেই কম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে অফিসে এসে হাজিরা দিয়েই ঈদ উদযাপন করতে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। দুপুরের পর অনেকটা সে াতের মতোই সচিবালয় ত্যাগ করতে শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকালের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। সচিবালয়ের সামনেও ছিল না দর্শনার্থীদের ভিড়। দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই বাড়ি ফেরার তাড়ায় ব্যস্ত। হাতের কাজ দ্রুত শেষ করে অনেকেই বের হয়ে গেছেন। তবে যারা ঢাকায় ঈদ করবেন তাদের উপস্থিতি ছিল। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে একাধিক কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে দেখা গেছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অনেকটা নির্ভার বসে সময় পার করছেন। কর্মকর্তারা আগেই চলে গেছেন। একইভাবে সচিবালয়ের ক্যান্টিনগুলোয়ও অন্যান্য দিনের মতো ভিড় দেখা যায়নি। প্রায় সবকটি ক্যান্টিনই ছিল ফাঁকা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদের তিন দিনের ছুটির সঙ্গে বাড়তি একদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এবং মাঝের দুই শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় সব মিলিয়ে ছয় দিনের বন্ধ পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এতে করে যারা প্রথমে বাড়ি যাবেন না বলে ভেবেছিলেন, তাদের অনেকেই ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন এবং গেছেন।

ব্যাংকে ভিড় : ঈদুল আজহার আগে শেষ দিনের লেনদেনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে ব্যাংকে। গতকাল রাজধানীর বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব শাখায় গ্রাহকদের চাপে কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। খুলতে হয়েছে বাড়তি বুথ। শেষ মুহূর্তে টাকা জমার চেয়ে উত্তোলনের পরিমাণই বেশি ছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন টাকার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে গ্রাহকদের। এ ছাড়া ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের টাকা নেওয়ার পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন গরুর হাটে বিশেষ সেবা দেওয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার নতুন অফিস খুলেছেন। যেসব স্থানে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন, এসব অফিসে টাকা জমা দেওয়ার পরিমাণ বেশি ছিল বলে জানা গেছে। এসব হাটগুলোয় আগামী ১০, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হবে।

সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে টাকা তুলতে লাইনে থাকা স্বপন মিয়া নামে এক গ্রাহক জানান, ‘ঈদের ছুটিতে ব্যাংক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। এ কারণে খরচের জন্য কিছু টাকা তুলতে এসেছেন। তা ছাড়া ঈদে বখশিশ দেওয়ার জন্য নতুন টাকারও প্রয়োজন। কিন্তু লাইনে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। এখনো কতক্ষণ লাগবে জানি না।’ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, শেষ দিনে গ্রাহকদের ব্যাপক চাপ গেছে। গ্রাহকরা উত্তোলন ও জমা দুটোই সমানভাবে করেছেন। তবে নতুন টাকা তোলার চাপ বেশি ছিল বলে জানান তিনি। তা ছাড়া কর্মকর্তার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকায় বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, নতুন টাকার জন্য গ্রাহকদের দীর্ঘ অপেক্ষা। এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতি করায় কাউকে লাইনে দাঁড়াতে হয়নি। তবে চেয়ারে বসে এক ঘণ্টার বেশি কাটাতে হয়েছে। হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে স্লিপ নিয়ে বসে থেকে নতুন টাকার নোট উত্তোলন করতে হয়েছে। গ্রাহকরা অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ডিজিটাল হওয়ায় একবারে বেশি কারও টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে অপেক্ষা তুলনামূলক কম করতে হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর