শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সড়কে ঝরল ২৩ প্রাণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বরসহ নিহত ৮

প্রতিদিন ডেস্ক

সড়কে ঝরল ২৩ প্রাণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস। এ ঘটনায় বরসহ একই পরিবারের আটজন নিহত হয়েছেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুর্ঘটনায় বরসহ ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের দুর্ঘটনা মিলিয়ে মোট ২৩ জন নিহত ও ৯১ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবাহী বাস ও  মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বরসহ একই পরিবারের ৮ জন নিহত হয়েছেন। সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শশই নামক স্থানে সিলেটগামী এনা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৭৮৫১) সঙ্গে মৌলভীবাজার থেকে আসা বরযাত্রীবাহী নোহা মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৯২২৬) মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসে থাকা বরযাত্রীসহ সাতজন মারা যান। গুরুতর আহত একজনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক  তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় মহাসড়কের উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুটি রেকার গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে পুনরায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার রূপসপুর গ্রামের বর আবু সুফিয়ান, বরের ভাই মো. কামরান, বরের বাবা ছয়ফুর রহমান, বরের দাদা মোক্তার হোসেন, বরের স্বজন আবদুর রশীদ, আবদুল হান্নান, আলী হোসেন ও জাকির। মাইক্রোবাস যাত্রী তারেকুল ইসলাম ও অজ্ঞাত এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ও এনা পরিবহন বাসের ৭ যাত্রীকে মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, আবু সুফিয়ানের বিয়ে উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে তারা সবাই ঢাকা যাচ্ছিলেন।  খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনার পর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রূপসপুর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পুংলি নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস উল্টে ৫ জন নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন লালমনিরহাটের আসমা বেগম (২৫), মমিনুল ইসলাম (৪০) ও হাবিব (১২)। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এলেঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী একটি যাত্রীবাহী বাস কালিহাতী উপজেলার পুংলি নামক স্থানে অপর একটি বাসকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহতদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পরপরই এলেঙ্গা ফাঁড়ির পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের রাজৈরের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কালীবাড়ী নামক স্থানে মাহিন্দ্র পরিবহনের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস সমুদ্র সৈকতের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—রাজৈর উপজেলার সানেরপাড় গ্রামের লোকমান মাতুব্বরের ছেলে ও মাহিন্দ্রর চালক বিল্লাল হোসেন (৪০), একই উপজেলার হাসানকান্দি গ্রামে কুট্টি মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩৫) এবং যুবক সালাউদ্দিন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মেরিনা আক্তার (২৭)সহ দুজন মারা গেছেন। এ ছাড়া মাহিন্দ্র ও বাসের ১২ যাত্রীকে আহত অবস্থায় রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। রাজৈর থানার এসআই রমজান হোসেন জানান, রাজৈর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করেছে। এ ঘটনার পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে উভয় দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের কাহারোলে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মকবুল হোসেন (৫৫) নামে এক বাইসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। মকবুল কাহারোল উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ্ব তমিজ উদ্দিনের ছেলে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কাহারোলের ভাতগাঁও ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানায়,  কাহারোলের মুকুন্দপুর ইউনিয়নের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মকবুল হোসেন বিকালে বাইসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে একটি যাত্রীবাহী বাস চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পটিয়া আমজুর হাট এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোচালক আবদুল মোনাফ (২৬) নিহত ও দুই গাড়ির অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোনাফ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চা-বাগান এলাকার আমির হামজার ছেলে। আহতরা হলেন সানজিদা (৫), আরিফ (২৬), ফরহাদ (২৬), মিনহাজ (১৮),  মো. জোসেফ (৪৮), মুজিবুর রহমান (৫০), নিজাম উদ্দীন (২৫), মো. মামুন (২৬), মোস্তাক উল্লাহ (১৭), হারুনুর রশিদ (৬০), মো. তৌসিফ (৫), মো. জাফর (৪০), মো. হারুন (২৪) প্রমুখ। পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ জিল্লুর রহিম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি আটক করা হয়েছে। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের মোস্তফিরহাট এলাকায় বাস চাপায় নীলকমল (৯) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মানুষ লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক ঘণ্টাব্যাপী অবরোধ করে রাখে। নীলকমল একই এলাকার বাসুদেব রায়ের পুত্র। পুলিশ জানায়, সন্ধায় বাড়ি থেকে দুধ বিক্রির জন্য মোস্তফিরহাট বাজারে আসে শিশু নীলকমল। দুধ বিক্রি শেষে বাড়িতে ফেরার সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে লালমনিরহাট থেকে রংপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় বিয়ের যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে আনিছুর রহমান (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫ যাত্রী। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দগোপালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনিছুর ওই ইউনিয়নের পুনতইর নামাচর পাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিন খরকু মিয়ার ছেলে। মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান জানান, বিয়ের যাত্রীবাহী একটি বাস উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়ন থেকে মহিমাগঞ্জ যাচ্ছিল। পথে খোর্দ্দগোপালপুর এলাকায় বাসটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আনিছুর। আহত হন কমপক্ষে ২৫ জন। আহতদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পারভীন আক্তার (২০) নামে এক তরুণী  নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময়  এ ঘটনা ঘটে। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার জাঙ্গালিয়ার কেমতলী গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে।  ময়নামতি হাইওয়ে থানার এস আই দেলোয়ার হোসেন জানান, বিকাল ৫টার দিকে নিমসার বাজার এলাকা দিয়ে পারভীন রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখন চট্টগ্রামগামী অজ্ঞাতনামা একটি মাইক্রোবাস ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে স্থানীয় ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর