মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাকিস্তানকে কড়া জবাবের হুঁশিয়ারি ভারতের

কাশ্মীরে হামলায় ১৭ ভারতীয় সেনা নিহত

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পাকিস্তানকে কড়া জবাবের হুঁশিয়ারি ভারতের

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পরই রাগে ফুঁসছে গোটা ভারত। ভারতের সেনা তরফে হামলার ঘটনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের জড়িত থাকার কথা জানানোর পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে সরব হলো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেনা, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিরা। প্রত্যেকেরই অভিমত, ‘অনেক সহ্য করা হয়েছে, আর নয়’। তা ছাড়া মৃত চার জঙ্গির কাছ থেকে পাওয়া ম্যাপে পশতু ভাষায় লেখা থেকে পরিষ্কার যে, হামলার ছক তৈরি করা হয়েছিল পাকিস্তানেই। উরিতে নিহত ১৮ জওয়ানের মধ্যে দুজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। এর মধ্যে একজন হাওড়ার গঙ্গাধর দলুই, অন্যজন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিশ্বজিৎ ঘড়াই। নিহত দুই জওয়ানের পরিবারের তরফেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উরি হামলার বদলা নিতে আর্জি জানানো হয়। উরির জঙ্গি হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে গোটা বলিউডও। অভিনেতা অক্ষয় কুমার টুইট করে এ হামলার নিন্দা করে বলেন, ‘সাহসী জওয়ানদের আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা...। এ ধরনের নির্বোধ সন্ত্রাসবাদ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। অনেক হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ! জয় হিন্দ।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ভারতের জাতীয় কুস্তিগির বিজেন্দ্র সিং বলেন, ‘পাকিস্তান যদি এবার যুদ্ধ চায় তবে তাই হোক।’ হামলায় মুখ খুলেছেন বিগ বি অমিতাভ। টুইট করে তিনি বলেন, ‘বিনা প্ররোচনায় এভাবে জওয়ানদের প্রাণ হারানোর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করব কেন্দ্রীয় সরকার এবার এ ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’ মুখ খুলেছেন বিশিষ্ট যোগগুরু বাবা রামদেবও। টুইট করে তিনি জানান, ‘যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। কিন্তু পাক মদদপুষ্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে এ ধরনের হামলা আরও ঘটতে থাকবে।’ একধাপ এগিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে সেনা ছাউনি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে অভিমত দিয়েছে সেনারা। মারের বদলে পাল্টা মার— এ তত্ত্বেই বিশ্বাসী ভারতীয় সেনার একাংশ। শুধু তাই নয়, ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেনার পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে ইসলামাবাদে এবার ভারতের পতাকা তোলা হবে। প্রয়োজনে বদলে দেওয়া হবে ইতিহাস। রাওয়ালপিন্ডি থেকে করাচি পর্যন্ত সব বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হবে পাকিস্তানের নাম। সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিম ঘাঁটিতে বিমানবাহিনীকেও তৈরি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাগুয়ার, মিরাজ, সুখই কিম্বা ব্রম্মস দিয়েও পাকিস্তানের সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানো যেতে পারে। অথবা শক্তিশালী বোমা ফেলেও গুঁড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে পাক সেনা ঘাঁটি। কিন্তু পাক বিমানবাহিনীর অভিমুখ যেভাবে ভারতের দিকে রয়েছে, তাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীরও বেশ কিছু ক্ষতি হতে পারে। ফলে সব দিক ভাবনাচিন্তা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। গতকালই নয়া দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এক শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক বসে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিৎ দোভাল, স্থল সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগসহ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তারা অংশ নেন। বৈঠক নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও সূত্রে খবর, উরি হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে তা আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে তুলে ধরতে চায় ভারত। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সব নিরাপত্তা এজেন্সিকে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হামলা প্রসঙ্গে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘সবকিছুই মানুষের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। পাকিস্তান কী বলছে তাতে আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি না। আমরা আমাদের পদক্ষেপ ভেবেচিন্তেই নেব।’ সব মিলিয়ে উরিতে জঙ্গি হামলার পরই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তাপ যে ক্রমে বেড়ে চলেছে তা পরিষ্কার। প্রসঙ্গত, রবিবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ জম্মু-কাশ্মীরের উরিতে ভারত-পাকিস্তান আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছেই সেনাবাহিনীর প্রশাসনিক দফতরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় নিহত হন ১৭ সেনা জওয়ান, আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। সেনার পাল্টা গুলিতে মারা যান চার জঙ্গিও।

সর্বশেষ খবর