মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আরও দুই জঙ্গি গোষ্ঠীর তথ্য চায় যুক্তরাষ্ট্র

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গত জুলাইয়ে তিন জঙ্গি গোষ্ঠীর তথ্য চাওয়ার পর এবার আরও দুই জঙ্গি বা জঙ্গি গোষ্ঠীর আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট কূটনৈতিক চ্যানেলে ওই তথ্য চাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি লিখেছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত জঙ্গি বা জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনো আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত ৯ আগস্ট নতুন করে আরও দুই জঙ্গির আর্থিক লেনদেনের তথ্য অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইইউ)-এর মহাব্যবস্থাপক (চলতি  দায়িত্বে) এবিএম জহুরুল হুদা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানান, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক স্পেশাল ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট (এসডিজিটি) হিসেবে তালিকাভুক্ত দুটি গোষ্ঠী/ব্যক্তির বাংলাদেশ তফসিলি ব্যাংকে কোনো তহবিল বা আর্থিক পরিসম্পদ থাকলে তা অবিলম্বে অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইইউ)-কে অবহিত করার জন্য সব তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি বা জঙ্গি গোষ্ঠীর কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি। নামের বিষয়ে বিএফইইউ-এর কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতেও রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত জুলাইয়েও যুক্তরাষ্ট্র তিনটি জঙ্গি গোষ্ঠীর লেনদেনের তথ্য জানতে চেয়েছিল। আমরা তখনো একইভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে কার্যক্রম রয়েছে এমন তিনটি সংগঠন হুজি, হুজি-বি এবং একিউআইএস-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এসব সংগঠনের অর্থ-সম্পদ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সংগঠনকে ‘স্পেশালি ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট’ বা এসডিজিটি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ওইসব ব্যক্তি ও সংগঠনের অর্থ-সম্পদ জব্দ করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের ডেজিগনেটেড ফরেন টেররিস্ট অর্গানাইজেশনের তালিকায় রয়েছে তার মধ্যে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি-বি) এবং হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)-এর নাম রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ৫ মার্চ হুজি-বি এবং ২০১০ সালের হুজি-কে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া গত ৩০ জুন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক নির্বাহী আদেশে ‘স্পেশালি ডেজিগনেটেড গ্লোবাল টেররিস্ট’ বা এসডিজিটি হিসেবে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) এবং এর নেতার নাম তালিকাভুক্ত করে ওই সংগঠন ও উল্লিখিত ব্যক্তির অর্থ-সম্পদ জব্দের ঘোষণা দেয়। এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি বাংলাদেশে একাধিক ব্লগার হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই ঘোষণায় বলেছে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদার কার্যক্রম সম্প্রসারণের ঘোষণা দেন এক ভিডিওবার্তায়। এই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে আসিম উমর, যে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত হরকাতুল মুজাহেদিনের সাবেক সদস্য। একিউআইএস বা আল- কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিক অভিজিৎ রায়, মার্কিন দূতাবাসের স্থানীয় কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান, বাংলাদেশি নাগরিক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, আহমেদ রাজীব হায়দার এবং শফিউল ইসলামকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

সর্বশেষ খবর