মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
লেখকের অন্য চোখ

পরীদের নিশ্চয়ই ছেলেধরা বলা যাবে না

সমরেশ মজুমদার

পরীদের নিশ্চয়ই ছেলেধরা বলা যাবে না

একটা ব্যাপার অল্প বয়সে আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকত না— পালিয়ে এসেই বলুন অথবা শাপগ্রস্ত হয়েই, অপ্সরা কেন প্রেম করার জন্য বেছে বেছে বৃদ্ধদের পছন্দ করতেন? কোনো শীর্ণ মুনি, যার গায়ে মাংস নেই, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে দেহ, পাকা চুল দাড়ি নিয়ে যিনি সাধনা করেই চলেছেন, সেই সব ফ্রাসট্রেশনে ভোগা মুনিদের কোন আক্কেলে পছন্দ হয়েছিল এই ডানাকাটা পরীদের?    আচ্ছা, এই পরীদের নিশ্চয়ই ছেলেধরা বলা যাবে না। বুড়োধরা বললে কানে খট করে লাগে। কিন্তু ওই বুড়োদের মধ্যে অপ্সরারা কি রস পেত? প্রথমত, ওই বুড়ো-হাবড়াগুলো থাকত পাহাড়ে, জঙ্গলে। একটা পাতার কুটির বানিয়ে বলত তপোবন। চারধারে সাপখোপ, পোকার ভিড়। ঘুমাত বাঘের বা হরিণের চামড়া পেতে। গাছে ফল থাকলে তা পেড়ে খেত। না থাকলে হরিমটর। ফলে শরীরের হাল অমন হতো। স্নান, যাকে মুনিরা অবগাহন বলত, তা সম্ভব হতো কাছেপিঠে পুকুর বা নদী থাকলে। না থাকলে পাকা দাড়ি এবং জটায় পুরুষ্টু উকুনরা উদ্দাম নৃত্য করত। উর্বশীরা তো স্বচ্ছন্দে কোনো সুদর্শন রাজকুমার, মন্ত্রীকুমার, নিদেনপক্ষে সওদাগরকুমারকে কব্জা করে দিব্যি রানীর মতো আরাম ভোগ করতে পারত। নিদেনপক্ষে বৃদ্ধ রাজাগুলোকে তো সহজেই পটানো যেত। তখনকার রাজারা চান্স পেলেই বিয়ে করে ফেলতেন। সেই রাজারা হয় দাড়ি কামাতেন নয় পাকা দাড়িতে দারুণ পারফিউম ঘষতেন। উত্তম মদিরা পান করতেন, তাদের জন্য যে খাবার তৈরি হতো তা প্রকৃত অর্থেই রাজভোগ। তা ওইসব রাজা বা রাজকুমারদের তুচ্ছ করে অপ্সরাদের নজর কেন ভাগাড়ে গেল তা নিয়ে আমার ধন্দ ছিল। চোখ আর একটু ফোটার পর বুঝলাম, মেয়েরা সমবয়সী ছেলের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে পারে, বিয়ে করতে চায় বয়সে ঢের বড় ছেলেকে। আমার এক বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে যে মেয়েটির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল তাকে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার পর সেই মেয়ে বলেছিল— তোমাকে কী করে বিয়ে করব বল? এখনো চাকরি পাওনি। পেলে একেবারে নিচের স্কেলে জয়েন করবে। স্কেলের সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে কত বছর লেগে যাবে বল! আমাকে অর্থাভাবে কষ্ট পেতে দেখলে তোমার একটুও ভালো লাগবে না। তাই না? অতএব, ওখানেই ছাড়াছাড়ি। বন্ধু খবর পেয়েছিল, অন্তত আট বছর চাকরি করা পুরুষের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মেয়েটির। এই যে সালমান রুশদি। লিখে নাম যত করেছেন ধনীও হয়েছেন তত। তার কয়েক নম্বর স্ত্রী তো প্রায় বালিকা ছিলেন। অন্তত পঞ্চাশ বছরের তফাৎ ওদের। বিয়ে ভেঙে গেছে। সুন্দরী এখন ফিল্মের দরজার কড়া নাড়ছেন। কিন্তু রুশদি সাহেবও চুপ করে বসে নেই। পরের স্ত্রী এসে গেছে।

তখনকার মেয়েরা একটু বোকাসোকা ছিল। এখন প্রেমে ফেলতে কোনো সমস্যা নেই। ফেসবুক তো হাতের কাছেই। তাছাড়া খবরের কাগজগুলোও পত্রমিতালির বিজ্ঞাপন ছাপছে। টেলিফোন নম্বরে ছেলেগুলো ফোন করছে হরদম। তাদের ডেকে আনছে এজেন্টরা। মোটা টাকা চাঁদা নিয়ে একদিনের মেম্বার বানিয়ে বান্ধবীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। সেই বান্ধবী অবশ্যই সোনাগাছি বা হাড়কাটায় থাকেন না। পরের দিন সকালে তাকে নামি কলেজে ছাত্রী হিসেবে ঢুকতে হয়। ইনি অনেক আধুনিক, অনেক ধড়িবাজ মেয়ে।

সর্বশেষ খবর