শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দিল্লিতে ‘ওয়ার রুমে’ গভীর রাতে বৈঠকে মোদি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

দিল্লিতে ‘ওয়ার রুমে’ গভীর রাতে বৈঠকে মোদি

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে উরির সেনাক্যাম্পে জঙ্গি হামলার বদলা নেওয়ার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। নিহত জওয়ানের পরিবারের লোকদের পাশাপাশি সেলিব্রেটি, রাজনীতিবিদ থেকে সেনার একাংশ প্রত্যেকেরই বক্তব্য— ‘অনেক হয়েছে, আর নয়। এবার সময় এসেছে পাকিস্তানে  পাল্টা আঘাত হানার।’ ঠিক সেই পরিপ্রেক্ষিতেই দিল্লিতে সেনাবাহিনীর ওয়াররুম পরিদর্শন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত রবিবার উরিতে জঙ্গি হামলার তিন দিন পর গত মঙ্গলবার দিল্লিতে ওয়াররুমে গিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মোদি। সাউথ ব্লকের এই ঘর যুদ্ধকালে কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই ঘরেই দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগ, বিমান বাহিনী প্রধান অরূপ রাহা ও নৌবাহিনী প্রধান সুনীল লাম্বা। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই বৈঠক। শত্রুঘাঁটিতে কীভাবে আঘাত হানা সম্ভব, তা বালুর মডেল করে, পয়েন্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে বোঝান তিন সেনাপ্রধান। যদি সত্যিই যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে ভারত কীভাবে পাকিস্তানে আঘাত করতে পারে কিংবা শত্রুপক্ষের সীমানায় ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি কিংবা সেনা ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, সেসব নিয়েই বিস্তারিত তুলে ধরেন তিন বাহিনী প্রধান। তবে ভারত পাকিস্তানে জঙ্গি ক্যাম্প ভাঙতে ঢুকলে তো পাকিস্তানও চুপ করে বসে থাকবে না। তারাও চেষ্টা করবে ভারতীয় সেনাকে আটকাতে। কারণ, পাকিস্তানকে মিয়ানমার মনে করাটা ভুল হবে। মিয়ানমার যেমন জঙ্গি নিকেশে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সহ?যোগিতা করে, পাকিস্তান সেটা কখনোই করবে না। কারণ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদই ভারতের বিরুদ্ধে তাদের প্রধান হাতিয়ার। এই পরিস্থিতিতে ?যদি সত্যিই মুখোমুখি ?যুদ্ধ হয় তবে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে সামরিক শক্তি। তবে ভারত যে সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান থেকে কয়েক কদম এগিয়ে তা সবারই জানা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের যা অস্ত্রভাণ্ডার আছে তাতে এক সপ্তাহের মধ্যেই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে গোটা পাকিস্তান। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (জিএফপি) র‌্যাঙ্ক অনুযায়ী বিশ্বের ১২৬টি দেশের মধ্যে চতুর্থ তালিকায় রয়েছে ভারত, অন্যদিকে পাকিস্তান রয়েছে ১৩তম স্থানে। ভারতের মোট জনসংখ্যা যেখানে ১২৫ কোটি ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৮৪ জন সেখানে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪৭। ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা, জওয়ান ও সব ধরনের কর্মী মিলিয়ে মোট সংখ্যা ১৩,২৫,০০০। সেখানে পাকিস্তানের সেনা সদস্য সংখ্যা মাত্র ৬,২০,০০০। অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। ভারতের মোট এয়ারক্রাফট রয়েছে ২,০৮৬টি, সেখানে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে মাত্র ৯২৩টি (অর্ধেকেরও কম)। ভারতের ট্যাংক রয়েছে ৬,৪৬৪টি।  পাকিস্তানের ট্যাংকের সংখ্যা মাত্র ২৯২৪টি। ভারতের বড় কামান রয়েছে ৭,৪১৪টি, পাকিস্তানের কামান ৩,২৭৮টি। ভারতের হেলিকপ্টার ৬৪৬টি, পাকিস্তানের ৩০৬টি। ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৬৭৯টি পাকিস্তানের আছে ৩০৪টি। আঘাত হানতে পারে এমন বিমান যেখানে ভারতের ৮০৯টি পাকিস্তানের আছে ৩৯৪টি। নৌবাহিনীর শক্তিতেও পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে ভারত। ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে যেখানে রয়েছে ১৪টি যুদ্ধজাহাজ, পাকিস্তানের ঘরে রয়েছে ৫টি। এ ছাড়াও ভারতের ভাণ্ডারে রয়েছে ২টি এয়ারক্রাফট কেরিয়ার (বিমান বহনকারী জাহাজ)। অবশ্য মেরামতি চলায় কয়েক মাস পাওয়া ?যাবে না এই দুটিকে। প্রয়োজনে কিন্তু দ্রুত মেরামতি শেষ করে তাকে ফের পানিতে ভাসাতেই পারে নৌসেনা। পাকিস্তানের কাছে এমন কোনো কেরিয়ার নেই।

সর্বশেষ খবর