মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ অফিসে এখন হাইব্রিডদের আনাগোনা

রাজনৈতিক সংকটে এদের পাওয়া যায় না, কাউন্সিল ঘিরে তৎপরতা

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগ অফিসে এখন হাইব্রিডদের আনাগোনা

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে দলের কেন্দ্রীয় ও সভাপতির কার্যালয়সহ নেতাদের কাছে আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে হাইব্রিড নেতাদের। বছর দুয়েক আগেও রাজনৈতিক সংকটের সময় এদের দেখা যায়নি। বিগত নির্বাচনের আগে তারা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক তত্পরতা, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও অতি আওয়ামী লীগারদের কোনো তত্পরতা ছিল না। বর্তমানে সরকারকে সুবিধাজনক অবস্থানে দেখে আবার মাঠে নেমেছেন অতি আওয়ামী লীগাররা। বিগত সময়ে সারা দেশে জনপ্রিয় রাজপথ দাবড়ানো নেতাদের চেয়ে হাইব্রিডরাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে এখন সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা দলের প্রভাবশালী নেতাদের বাসা-বাড়ি ও অফিসে ধরনা দিচ্ছেন।

আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে নবীন-প্রবীণে দলকে ঢেলে সাজাবেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এবারের কাউন্সিলে শূন্যপদ পূরণ ও নতুন সৃষ্ট আটটি পদসহ বেশ কিছু নতুন মুখ আসছে। এতে নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণ হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম লেখাতে এখন চলছে জোর তত্পরতা। মাঠের রাজনীতিতে পরীক্ষিত নেতাদের চেয়ে লবিংয়ে এগিয়ে হাইব্রিড নেতারা। তারা দলীয় সভাপতির কার্যালয়সহ নেতাদের বাসা-বাড়িতে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ অযাচিত হয়েই আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত উপকমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন অথবা কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের যে কোনো কর্মসূচিতে সামনের দর্শকসারিতে হলেও অংশগ্রহণ করছেন। গতকালও দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ও সংসদ ভবন এলাকায় কয়েকজন নেতার অফিসে হাইব্রিড নেতাদের সরব উপস্থিতি। হাইব্রিডদের আনাগোনা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে দুজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাই, এখন অনেকেই কার্যালয়মুখী হয়েছেন। যাদের অনেককেই দুই বছর আগে দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায়নি, তারা এখন বসন্তের কোকিলের মতো আসছেন।’ জানা গেছে, দুই মেয়াদে নিজেদের আওয়ামী লীগ সাজিয়ে বিভিন্ন নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হাইব্রিডরা ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ জড়িয়েছিলেন টেন্ডার বাণিজ্যে। জেলা, মহানগর থেকে উপজেলা, তৃণমূল পর্যন্ত হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের জয়জয়কার। উপেক্ষিত থেকেছেন দীর্ঘদিনের পুরনো ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। দলীয় কর্মীদের অভিযোগ, সাংগঠনিক কর্মসূচিতে হাইব্রিড নেতারা বরাবরই অনুপস্থিত। দল ও সরকারে কর্মিবিচ্ছিন্ন হাইব্রিডরা ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে। মৌসুমি পাখির মতোই পর পর দুবার ক্ষমতায় আসা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের তালিকায় নতুন যোগ হয়েছেন প্রবাসী আওয়ামী লীগাররা। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে ইতিমধ্যে হাইব্রিডরা লাভজনক নানা প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। মৌসুমি পাখির মতোই এসব হাইব্রিড নেতা ঘন ঘন দেশে আসছেন-যাচ্ছেন। এসব নেতার কেউ কেউ দলীয় পদ পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়েই গঠিত হবে। যারা অতীতে দলের দুর্দিনে মাঠে কাজ করেছেন, পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত, তারাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন।

সর্বশেষ খবর