মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

হাসিনা-পুতিন যৌথ সিদ্ধান্তে বাধা যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ

ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম) সম্মেলনে যোগ দিতে জুলাইয়ে মঙ্গোলিয়া সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি সাইডলাইন বৈঠক করেন তিনি। ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দুই দেশের সরকারপ্রধান বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সরাসরি ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনের যৌথ সিদ্ধান্ত নেন। তবে দুই রাষ্ট্রনেতার এ সিদ্ধান্ত আপাতত কার্যকর করা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক মতামতে জানিয়ে দিয়েছে, ‘রাশিয়ার সঙ্গে করেসপন্ডিং ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে সরকারের তত্পরতায় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে। তবে রাশিয়ার প্রথম সারির ব্যাংকগুলোর ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ফরেন এসেটস কন্ট্রোল কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে করেসপন্ডিং ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন করা যাচ্ছে না।’ জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই। আবার ব্যাংকিং সম্পর্ক না থাকায় প্রচলিত এলসি পদ্ধতিতে দেশটির সঙ্গে সরাসরি আমদানি-রপ্তানিও করা যায় না। তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও চামড়া ছাড়া কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। কিন্তু বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকায় বাংলাদেশের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ায় যায়। ইউরোপের কোম্পানিগুলো ক্রেডিট সেলের মাধ্যমে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য সরবরাহ করে। এর ফলে দামও বেশি পড়ে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসেম সম্মেলনে সাইডলাইন বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনে যৌথ সিদ্ধান্ত নেন। পরে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হলে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ ধরনের মতামত জানিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মাসুদ বিশ্বাস ১৯ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ ধরনের মতামত জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে এ কর্মকর্তা বলেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যদি রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে ইইউ সদস্যভুক্ত দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর যে করেসপন্ডিং সম্পর্ক রয়েছে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা হলেও রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির সঙ্গে ব্যাংকিং সুবিধা সৃষ্টির বিষয়টি শুধু এ দুই দেশের আন্তরিকতার ওপর নির্ভরশীল নয়। এ ছাড়া রাশিয়ান মুদ্রা রুবল সহজে বিনিময়যোগ্য নয় বিধায় টাকা ও রাশিয়ান রুবলের মধ্যে সরাসরি বিনিময় হার নির্ধারণ সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য জানিয়েছে, করেসপন্ডিং ব্যাংকিং হিসাব খোলা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে সুইফটের ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজম্যান্ট অ্যাপ্লিকেশন (আরএমএ)’ সেবার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে রাশিয়ান কমনওয়েলথভুক্ত নয়টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর প্রায় ৫০টি আরএমএ রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২২ আগস্ট দেশের অথরাইজড ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোয় আরও বেশিসংখ্যক আরএমএ স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী, অনুমোদিত ডিলার ব্যাংক যে কোনো বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে অবাধ ও বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রায় করেসপন্ডিং ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে এডি ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা বাস্তবসম্মত কারণে রাশিয়ান কমনওয়েলথভুক্ত দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সরাসরি হিসাব চালু করতে সক্ষম হয়নি।

সর্বশেষ খবর