শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
রাজনীতির হালচাল

পদ পেতে নিষ্ক্রিয়রাই বেশি সক্রিয়

রফিকুল ইসলাম রনি

পদ পেতে নিষ্ক্রিয়রাই বেশি সক্রিয়

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আর মাত্র ২১ দিন বাকি। সম্মেলনে কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারা এখন সবচেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ তালিকায় রয়েছেন ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বা জেলা, মহানগরের দায়িত্বে ছিলেন এমন নেতা। বিশেষ করে পদপদবি না পেয়ে একসময় নিষ্ক্রিয় থাকা সাবেক ছাত্রনেতারা এখন প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের অফিস বা বাসায় যাতায়াত করছেন। গত কয়েক দিন দলীয় কার্যালয়, সিনিয়র নেতাদের অফিস ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রমতে, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগানে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনটি জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। এ সম্মেলন সফল করতে প্রায় প্রতিদিনই কাউন্সিল বাস্তবায়নে কোনো না কোনো উপকমিটির বৈঠক হচ্ছে। এ বৈঠকগুলোয় কমিটির সদস্য নন এমন নেতারাও যাচ্ছেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ না নিলেও পরে সংবাদ সম্মেলনের সময় বা নেতাদের কাছে নানাভাবে নিজেদের উপস্থাপন করছেন। গত কাউন্সিল থেকে দুই মাস আগেও যাদের চেহারা দেখা যায়নি তারাই এখন ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। উদ্দেশ্য নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের অতীতের কর্মকাণ্ড এবং বর্তমানে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরছেন। তাদের অনুসারীরাও নেতাদের নামে পৃথক ফেসবুক পেজ খুলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। গত এক সপ্তাহ ধানমন্ডির সভাপতির কার্যালয়, দলীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অফিস ঘুরে দেখা গেছে, সাবেক ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগ বা জেলা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন সাবেক নেতাও ভিড় করছেন। গতকাল এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সাবেক ছাত্রনেতাদের ভিড়ে ঠাসা। ওই নেতা কাকে রেখে কার সঙ্গে কথা বলবেন তা নিয়ে ত্রাহি অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, কাউন্সিল আসছে তাই অতিথি পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। সারা বছর দলীয় কোনো কাজে তাদের পাওয়া যায়নি। এখন তাদের ভিড়ে নিজেদের কেউ এসে অফিসে দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছেন না। রাজনীতিতে সক্রিয় কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই এমন বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, ‘আমরা আশা করি কাজের মূল্যায়ন নেত্রী করবেন।’ হঠাৎ সক্রিয়দের কারণে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। কারণ তারা সারা বছর নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আগস্টের মাসব্যাপী কোনো প্রোগ্রাম কিংবা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কখনো শ্রদ্ধা জানাতেও দেখা যায়নি ওইসব নেতাকে। দল বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় পড়েছে, সেসব কঠিন মুহূর্তেও তারা দলীয় কার্যালয়ে পর্যন্ত আসেননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির এক সহ-সম্পাদক বরিশাল বিভাগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা দলে সক্রিয় ছিলেন না তারা কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যালয়গুলোয় আসেন, বিভিন্ন নেতার কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ান। এতে সমস্যা যেমন তেমন আবার উৎসবমুখর পরিবেশও সৃষ্টি হয়। তবে এসব নেতা কাজের ক্ষতি করেন বলে আমি মনে করি। আর আওয়ামী লীগের মতো একটি দলে কাজের মূল্যায়ন হয়। অন্যান্য দলের মতো অর্থের মূল্যায়ন হয় না। সুতরাং তাদের নিয়ে অন্তত আমরা যারা সক্রিয় তারা চিন্তা করি না।

সর্বশেষ খবর