শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

একাধিক পদে ৪৬ নেতা খালেদার আলটিমেটাম যাচ্ছে

মাহমুদ আজহার

একাধিক পদে ৪৬ নেতা খালেদার আলটিমেটাম যাচ্ছে

দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েক দফা বলার পরও একাধিক পদ ছাড়ছেন না বিএনপির অন্তত ৪৬ নেতা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একাধিক পদে থাকা নেতাদের আর মাত্র এক সপ্তাহ সময় দিতে চান তিনি। আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়ে চিঠিও তৈরি করা হয়। কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহর মৃত্যুর কারণে চিঠি পাঠানো হয়নি। অবশ্য নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয়েছে। দলীয়ভাবে বিএনপি এখন শোক পালন করছে। তবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা  বেঁধে দু-এক দিনের মধ্যেই চিঠি পাঠানো হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে ‘অল্প শব্দে কঠোর বার্তা’ পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় একাধিক পদ ছেড়ে না দিলে বেগম জিয়া নিজের মতো করে নেতাদের পদ নির্ধারণ করে দেবেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে একাধিক পদে রয়েছেন অন্তত ৬২ জন। এর মধ্যে ১৬ জন এক পদ রেখে অবশিষ্ট পদ ছেড়ে দিয়েছেন। বাকিরা এখনো গড়িমসি করছেন। কেউ কেউ বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনায় দুই পদে থাকার চিন্তাভাবনা করছেন। কেউ কেউ ছাড়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। জেলা নেতৃত্ব ছাড়তে রাজিও হয়েছেন কেউ কেউ। তবে গুটিকয় নেতা একাধিক পদ ছাড়তে গড়িমসি করছেন বলেও সূত্রে জানা গেছে। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, প্রায় সব নেতার সঙ্গেই ফোনে কথা বলা হয়েছে। সবাইকে সসম্মানে পদ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ চিঠি পাঠানো এক ধরনের কঠোর বার্তা। নেতারা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলে চিঠি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কিন্তু স্বেচ্ছায় পদ না ছাড়লে চিঠি পাঠানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। জানা যায়, কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক নেতাই জেলার নেতৃত্বে থাকতে চান। জেলার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করতে চান। তৃণমূল নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই কেউ কেউ এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। একাধিক পদে থাকা বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা যায়। আবার কেউ কেউ নিজের পছন্দের নেতাকে জেলা নেতৃত্বে রেখে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করার তত্পরতাও চালাচ্ছেন। কোনোভাবেই জেলা হাতছাড়া করতে চান না তারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনের সমন্বয়ক মো. শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাধিক পদে থাকা অনেক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তারা ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। আশা করি, খুব শিগগিরই তারা এক পদ রেখে অন্য পদ ত্যাগ করবেন।’ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে একাধিক পদ ছেড়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মোজাহার আলী প্রধান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আশরাফ উদ্দিন নিজান, আফরোজা খান রিতা, তৈমূর আলম খন্দকার, ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, শিরিন সুলতানা, আসিফা আশরাফি পাপিয়া প্রমুখ। জানা যায়, একাধিক পদে থাকা বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী (অব.), মিজানুর রহমান মিনু, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মসিউর রহমান, আসাদুল হাবিব দুলু, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, লায়ন আসলাম চৌধুরী, লায়ন হারুন অর রশীদ, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মেহেদী আহমেদ রুমী, শাহজাদা মিয়া, ফরিদ উদ্দিন মানিক, আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান, শরিফুল আলম, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ওয়ারেস আলী মামুন, মীর সরাফত আলী সপু, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, হাজী আমিনুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান বাবু, শাহজাহান মিয়া, কামরুল মনির, শামসুজ্জামান, শফিকুল হক মিলন প্রমুখ। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি জনগণের রাজনীতি করছি। তাই পটুয়াখালীর রাজনীতিই করতে চাই। তার পরও যদি দলের চেয়ারপারসন কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তা মেনে নেব।’ কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘বরিশাল জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন আমরা চাই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। এত তাড়াহুড়া করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। দলকে শক্তিশালী করতে হলে কাউন্সিল করেই কমিটি করা উচিত।’

সর্বশেষ খবর