শিরোনাম
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

একঘরে হওয়ার পথে পাকিস্তান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় একঘরে হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছে পাকিস্তান। সার্ক সম্মেলন ঘিরে এটা স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের পাশাপাশি একই দিনে বাংলাদেশ, ভুটান ও আফগানিস্তানের পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা এ অঞ্চলে পাকিস্তানকে একঘরে করার শামিল হিসেবেই দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে ভারত-পাকিস্তানের    উত্তপ্ত পরিস্থিতি কেটে গেলে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে বলেও আশা করছেন তারা। বিশ্লেষকদের মতে, অতীতে বিভিন্ন সময় কোনো সদস্য দেশের কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়েছে, পিছিয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে চার দেশের সরে দাঁড়ানোর নজির নেই। স্বাগতিক দেশের ভূমিকা নিয়ে অন্য দেশের প্রশ্ন তোলার বিষয়টিও তেমন একটা ঘটেনি। অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন যৌক্তিক কারণও আছে সদস্য দেশগুলোর। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর কারণে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এ দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। এতে আফগানিস্তানও আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা যায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ সৈন্য নিহত হওয়ার পর দিল্লি সার্ক সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সন্ত্রাসে মদদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। এরপর ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জাতিসংঘের এক বৈঠকে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানকে একঘরে করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে আসছি। আলোচনার জন্য কোনো পূর্বশর্ত চাপানো হয়নি। ভারত চেয়েছিল বন্ধুত্ব। কিন্তু পাকিস্তান ফেরত দিল উরি-পাঠানকোট। সন্ত্রাসবাদ মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু। সেই জঙ্গিদের কে অস্ত্র দিচ্ছে? কে আশ্রয় দিচ্ছে? সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল হতে দিতে চায় না কারা? যারা সন্ত্রাসবাদকে মদদ দিচ্ছে, তাদের একঘরে করতে হবে।’ এরপর পাকিস্তানকে একঘরে করতে দিল্লির উদ্যোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সার্ক সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত বলে মনে হচ্ছে। ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, ‘পাকিস্তান আসলে সার্ককেও ভারতকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে, আর গণ্ডগোলটা সেখানেই। ওদের ধারণা, সার্কে যে কোনো আঞ্চলিক উদ্যোগে যদি বাধা দেওয়া হয়, তাহলে অন্য সদস্য দেশগুলো ভারতের ওপর চাপ দেবে, ভারতকে সবাই মিলে বলবে তোমরা বিষয়টা একটু দেখ। অতীত দেখলে দেখা যাবে বার বার তারা এ কারণেই নানা পদক্ষেপে বাধা দিয়েছে। যেমন ধরুন, কানেক্টিভিটি নিয়ে যখন সার্কে মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট করার প্রস্তাব এলো, পাকিস্তান বলল তোমরা করলে কর, আমরা ওতে নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বিবিআইএন এগ্রিমেন্ট করা হলো, সমঝোতাটা রিজিওনাল থেকে সাব-রিজিওনাল হয়ে গেল। পাকিস্তান বাদ পড়ে গেল। ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অবশ্য বলেছেন, ‘সার্ক সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নিজস্ব। অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্ররোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ প্রতিমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো মৌলিক বিষয়ে কিছুতেই আপস করবে না বাংলাদেশ। তবে তিনি সার্কের অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।

সর্বশেষ খবর