শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সার্কের এত সঙ্গিন অবস্থা আগে কখনো হয়নি

জিন্নাতুন নূর

সার্কের এত সঙ্গিন অবস্থা আগে কখনো হয়নি

কিউ এ এম এ রহিম

দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) এত সঙ্গিন অবস্থা এর আগে কখনো হয়নি। অতীতে সার্ক অনেক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারলেও এবার জোট সফল হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এবার যদি সার্ক তার দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম না হয় বুঝতে হবে যে, সার্কের ভবিষ্যৎ এখানেই শেষ। সার্ক সচিবালয়ের সাবেক মহাসচিব ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক কিউ এ এম এ রহিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। সার্ক সচিবালয়ের সাবেক মহাসচিব বলেন, একসঙ্গে চারটি দেশের (ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান) সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার বিষয়টি এবারই প্রথমবার ঘটল। অতীতে একটি দেশের আপত্তির কারণে সামিট পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা বহুবার ঘটেছে। তবে এর আগে একসঙ্গে দুইয়ের অধিক দেশের সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা কখনো ঘটেনি। নিয়ম অনুযায়ী সার্কের শীর্ষ সম্মেলনে তার সব সদস্য দেশকে উপস্থিত থাকতে হবে। কোনো দেশ সম্মেলনে উপস্থিত না হলে সেই দেশটির মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে না। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। এবার একসঙ্গে একইদিনে সার্কের চারটি সদস্য দেশ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। সে হিসেবে আপাতত আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। পরে যদি সব সদস্য দেশ একমতে পৌঁছাতে পারে তবেই তা অনুষ্ঠিত হবে। কিউ এ এম এ রহিম বলেন, যে চারটি দেশ সম্মেলনে যোগ দেবে না বলে জানিয়েছে তারা সবাই না যাওয়ার পেছনে নিজস্ব কারণ দেখিয়েছে। বিভিন্ন কারণে দেশগুলো সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে। আর যে চারটি দেশ যাচ্ছে না তাদের মধ্যে এক ধরনের বিশেষ সম্পর্ক আছে। তবে দেশগুলো যে একটি নির্দিষ্ট কারণে একমত হয়ে জোট বেঁধে সার্ক সম্মেলনে যাচ্ছে না এমনটি দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়নি। তারা বলেছে যে, নিজস্ব কারণেই সেখানে যাচ্ছে না। যেমন— বাংলাদেশ বলছে পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সে কারণে তারা সে দেশে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবার ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পাকিস্তান দেশটির সীমান্তে জঙ্গি তত্পরতা চালানোয় তারা এবার পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না। অর্থাৎ এই চারটি দেশ সম্মেলনে না যাওয়ার বিষয়ে যে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন নয়। তবে এই কূটনৈতিক বলেন, একইদিনে একসঙ্গে চারটি দেশ বিভিন্ন কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যাচ্ছে না তা একটি কাকতালীয় ব্যাপার। অনেকে ধারণা করছেন যেসব দেশ যাচ্ছে না তাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে সমমনা মনোভাবও কাজ করে। তিনি বলেন, এর আগেও অনেকবার সার্কের সামিট হয়নি। বাংলাদেশে এর আগে দুইবার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। ১৯৯২ সালে ঢাকায় যে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল তা শেষ মুহূর্তে এসে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৯৩ সালের এপ্রিলে তা অনুষ্ঠিত হয়। আবার ২০০৫ সালে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তাও বন্ধ হয়ে গিয়ে কয়েক মাস পিছিয়ে পরে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ সার্ক সম্মেলন বন্ধ হয়ে গিয়ে তা পরে আবার অনুষ্ঠিত হওয়ার নজির আছে। এসব ক্ষেত্রে সার্কের মহাসচিব ও চেয়ারম্যান দেশ কোনো কারণে সম্মেলন বন্ধ হয়ে গেলে তত্পরতা চালিয়ে আপত্তি জানানো দেশটিকে বোঝানোর উদ্যোগ নেয়। সদস্য দেশটি যখন একমতে পৌঁছায় তখনই পুনরায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারের বিষয়টি অন্যরকম। কারণ এবার একটি দেশ নয়, একসঙ্গে চারটি দেশ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আর চারটি দেশই না যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়েছে। সেক্ষেত্রে সবাইকে বুঝিয়ে একমতে পৌঁছানো সহজ হবে না। যদিও সার্কের বর্তমান সভাপতি দেশ নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল প্রচন্ড সম্মেলন যাতে হয় তার জন্য বিকল্প স্থান খুঁজতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি যদি সফল হন তবে সেটি আলাদা কথা।

সর্বশেষ খবর