মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট

ঢাকা চায় ২০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ঢাকা চায় ২০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা

আগামী ১৪ অক্টোবর প্রায় ২০ থেকে ২২ ঘণ্টার সফরে ঢাকা আসবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। এই সফরে ২৫ বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা চায় ঢাকা। অবশ্য এ প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। একসময় এসব প্রকল্পে সহায়তায় চীন আগ্রহ দেখালেও দীর্ঘদিন ধরে নীরব রয়েছে দেশটি। এবার চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে হ্যাঁ বা না নিশ্চিত করে একটি জবাব প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। চীন অর্থায়ন না করলে অন্য উৎস থেকে অর্থ  পাওয়ার চেষ্টা করতে পারা যাবে। অবশ্য এই ২৫ উন্নয়ন প্রকল্পের বাইরেও বেশকিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ব্লু ইকোনমিতে সহযোগিতা ও চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য জাহাজ সংগ্রহের মতো বৃহৎ প্রকল্প রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে চীনের। এক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে চীনের একটি প্রস্তাব নিয়ে দেড় বছর ধরে আলোচনা চলছে। এবার চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে চীন সফরে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকেও চীনের প্রেসিডেন্ট বরাবর আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়। এসব আমন্ত্রণের জবাবে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের কথা জানিয়েছিলেন শি জিন পিং। সে পরিপ্রেক্ষিতেই আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকা আসছেন চীনের  প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। দিন হিসাবে সফরটি দুই দিনের হলেও ২৪ ঘণ্টার কম সময় বাংলাদেশে কাটাবেন তিনি। সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর যাবেন ভারতের গোয়ায়। সেখানে ব্রিকস সামিটে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সামিটে যোগ দেবেন। আগামী ১৫ ও ১৬ অক্টোবর হবে নতুনভাবে আলোচনায় আসা এ জোটের শীর্ষ সম্মেলন। ইতিমধ্যে ঢাকা ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা  জোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন শি জিন পিংয়ের সফরের। এক দফায় ঢাকা ঘুরে গেছেন চাইনিজ অগ্রগামী দল। চলছে সফরসূচির প্রস্তুতি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। ২৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এরই মধ্যে ২০ দশমিক ০৯৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থায়নের জন্য চীনকে পাঠানো তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর দুটিতে এরই মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্প দুটি হলো ‘ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-৩’ এবং ‘কনস্ট্রাকশন অব টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফুলী’। এ দুটি প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১৫ কোটি ও ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। উভয় প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংকের কাছে ঋণের আবেদন পাঠানো হয়েছে। আর বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে— ৫০ কোটি ডলারের ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রজেক্ট’; ৫০ কোটি ডলারের রাজশাহী ওয়াসার ‘সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রজেক্ট’; ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ‘সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং ফাইভ মিলিয়ন ইলেকট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেকট্রনিক এনার্জি মিটার প্রজেক্ট’; ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম  নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট’; ১৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-১)’ প্রকল্প; ৯১ কোটি ৭১ লাখ ডলারের ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-২)’; ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের ‘পাওয়ার গ্রিড  নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’; কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ এবং ২০ কোটি ডলারের ‘মডার্নাইজেশন অব  টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্প। প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে— ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘কনভার্সন অব এমজি রেলওয়ে প্রাক ইনটু ডিজি রেলওয়ে ট্রাক ইন আখাউড়া টু সিলেট সেকশন অব বিআর’; ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার ব্যয়ের ‘কনস্ট্রাকশন অব মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে অ্যান্ড কোস্টাল  প্রোটেকশন ওয়ার্ক ফ্রম সীতাকুণ্ড-চিটাগাং-কক্সবাজার’ এবং ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ের ‘স্ট্যাবলিশিং ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’। তালিকাভুক্ত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে  রেলওয়ের ২৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের ‘কনস্ট্রাকশন অব এ ডিজি ট্রাক প্যারালাল টু দ্য এক্সিসটিং এমজি লাইন ইন জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সেকশন’; ৭৫ কোটি ২৭ লাখ ডলারের ‘কনস্ট্রাকশন অব ডাবল লাইন (ডুয়ালগেজ) বিটুইন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২৪  কোটি ৯১ লাখ ডলারের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড মডার্নাইজেশন অব মংলা পোর্ট; ২৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের ‘এক্সটেনশন অব দ্য এক্সিসটিং আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং অপারেশন অব বড়পুকুরিয়া কোল মাইন অ্যাডজাসেন্ট দ্য সাউদার্ন অ্যান্ড নর্দান সাইড অব দ্য বেসিন টু ইনক্রিজ দ্য প্রেজেন্ট  প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি অব দ্য বড়পুকুরিয়া কোল মাইন’; ৪৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারের ‘গজারিয়া ৩৫০ মেগাওয়াট  কোল ফায়ার্ড থারমাল পাওয়ার প্লান্ট’; ৫২ কোটি ১৫ লাখ ডলারের ‘প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর বিপিডিবি ডিস্ট্রিবিউশন জোনস’; ২০ কোটি ডলারের ‘কনস্ট্রাকশন অব নিউ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো নিয়ার ধিরাশ্রম রেলওয়ে  স্টেশন’; ২৩ কোটি ডলারের ‘রিপ্লেসমেন্ট অব ওভারলোডেড ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার ফর প্রভাইডিং রিলাইবল ইলেকট্রিসিটি ইন আরই সিস্টেম’; ১৫ কোটি ডলারের ‘ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন, ড্রেনেজ অ্যান্ড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল সাইজ পৌরসভা’ এবং ২৮  কোটি ডলারের ‘ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন অব দ্য পাবলিক সেক্টর জুট মিলস অব বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন’। এ ছাড়া রয়েছে ১৬০  কোটি ৩৩ লাখ ডলারের ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়ক প্রকল্প।

সর্বশেষ খবর