সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারী কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত ট্রাম্প

আরও অডিও ফাঁস, সমর্থন হারাচ্ছেন দলীয় নেতাদের

প্রতিদিন ডেস্ক

নারী কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ২৯ দিন। এই শেষ সময়ে এসে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক নারী কেলেঙ্কারির কাহিনী মার্কিন রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। শুক্রবারের অডিও-ভিডিওর পর শনিবার প্রকাশিত হয়েছে একটি দীর্ঘ অডিও। তাতে তিনি রেডিও জকি হাওয়ার্ড স্টার্নের সঙ্গে নিজের যৌনজীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্বীকার করেছেন ১৪ বছর বয়সেই নিজে কুমারত্ব হারিয়েছেন। এ ছাড়া আলোচনা করেছেন নিজের মেয়ে ইভানকার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে। স্টার্নের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কোনো নারীর ঋতুস্রাব চলাকালীন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে। এসবই এখন ওপেন সিক্রেট। সবমিলিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচন থেকে তাকে সরে যাওয়ার দাবিও  বেশ জোরালো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। ইতিমধ্যেই একের পর এক রিপাবলিকান নেতারা নিজ দলের প্রার্থী ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতেই আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় দ্বিতীয় দফায় অপর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিতর্কে অংশ নিতে হবে প্রথম দফার বিতর্কে পিছিয়ে পড়া ট্রাম্পকে। ৯০ মিনিটের এই বিতর্কের পর পরিষ্কার হতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন গতিপথ। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে থাকা ট্রাম্পের বিপরীতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন টিভি বিতর্কের জন্য প্রস্তুতি নিতেই ব্যস্ত ছিলেন গত দুই দিন। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুসারে, ১৯৯৭ সালে রেডিও জকি হাওয়ার্ড স্টার্নকে একটি সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ১৪ বছর বয়সে তিনি নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যে নারীর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘ওই নারী সে সময়ে ছিলেন একজন তরুণী। কিন্তু তিনি ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী ও হট। ওই ‘হট মেয়েটি হয়তো হাই স্কুল বা গ্রামার স্কুল বা ওই রকম কোনো স্কুলে পড়াশোনা করত। তবে সে ছিল হট। পরবর্তীতে তাকে আর দেখিনি।’ স্টার্নের সঙ্গে রেডিও প্রোগ্রামে ট্রাম্প মাঝে মাঝেই নিজের ব্যক্তিগত যৌন জীবন নিয়ে আলোচনা করতেন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের একটি সাক্ষাৎকারে রেডিওর সহ-উপস্থাপক আরতি ল্যাং ট্রাম্পের কাছে প্রশ্ন করেন তিনি কি কখনো একসঙ্গে বহু নারীর সঙ্গ ভোগ করেছেন। এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি একসঙ্গে তিনজন নারীর সঙ্গ ভোগ করেছেন। তবে স্ত্রী মেলানি ট্রাম্পের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক। তবে শুক্রবার নারীবিদ্বেষী একটি ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর পুরো রিপাবলিকান শিবিরে কালো ছায়া নেমে এসেছে। যে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘তারকারা নারীদের নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারেন আর এতে ওই নারীরাও বাধা দেবেন না।’ শুধু তাই নয় তার অতীতের কাণ্ডকারখানায় তার স্ত্রীও বিব্রত লজ্জিত। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এক বিবাহিত অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তার আগ্রহের কথা জানান। তাছাড়া, মিস ইউনিভার্সসহ কয়েকটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক ট্রাম্প সুন্দরী নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাও জানিয়েছিলেন।

এদিকে মেয়েদের নিয়ে তার অশালীন ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়ছে। আর এই চাপ আসছে প্রধানত তার নিজের দল রিপাবলিকান পার্টি থেকে। কিন্তু ট্রাম্প বলছেন কখনোই তিনি নির্বাচন থেকে সরবেন না। রিপাবলিকান বহু নেতা বলেছেন, তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। রিপাবলিকান দলের এই নেতাদের মধ্যে রয়েছেন গত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী জন ম্যাককেইন এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্জা রাইস। অশালীন মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিলেও সেই ঝড় এখনো থামেনি। ম্যাককেইন বলেছেন, এ ধরনের মন্তব্যের পর তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা কঠিন। তিনি বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত নয়। তার সরে দাঁড়ানো উচিত।

রিপাবলিকান নেতাদের সমর্থন প্রত্যাহার : গত শুক্রবার ও শনিবার ট্রাম্পের অডিও সাক্ষাৎকারটি ফাঁস হওয়ার পর পরই বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা জানিয়ে দেন তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। ট্রাম্পের রানিং মেটকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া রিপাবলিকান  নেতার সংখ্যা ৩০ জন ছাড়িয়েছে। জন ম্যাককেইন, পল রায়ান, কন্ডোলিত্জা রাইস, নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিনেটর কেলি আয়োটি, আলাস্কার সিনেটর লিসা মুরকোওয়াস্কি, মেইনের সিনেটর সুসান কোলিংস, আলাবামার গভর্নর রবার্ট বেন্টলে, ওহিওর সিনেটর রব পোর্টমেনসহ অনেক সিনিয়র রিপাবলিকান নেতা। তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

ট্রাম্পকে সরানো কি আদৌ সম্ভব?— ট্রাম্পের প্রার্থিতাকে কেন্দ্র করে রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরে তৈরি হওয়া সংকটের ব্যাপারে গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলছেন, নির্বাচনের মাত্র এক মাস বাকি থাকায় এবং কোথাও  কোথাও আগাম ভোটগ্রহণের কারণে ট্রাম্পকে সরিয়ে  দেওয়া এবং কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করার সম্ভাবনা  নেই। তবে ট্রাম্পকে নির্বাচন থেকে সরানোটা অসম্ভব নয় বলেই মত দিয়েছেন তারা। রক্ষণশীল আইনজীবী জিম বপ এক্ষেত্রে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটি (আরএনসি)-এর গঠনতন্ত্রের ব্যাপারটি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আরএনসি-এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মৃত্যু, নিজে থেকে সরে যাওয়া (ডিক্লাইনেশন) বা অন্য কোনো কারণে যদি দলের কোনো পদ শূন্য হয় তবে সদস্যরা ওই পদ পূরণ করতে পারবেন।’ সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের স্থলাভিষিক্ত করতে হলে তার মৃত্যু হতে হবে, নয়তো তাকে অযোগ্য হতে হবে নয়তো তাকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে হবে।

বিব্রত ট্রাম্পের স্ত্রীও : নারী নিয়ে ট্রাম্পের অশ্লীল ও কুিসত মন্তব্যে নাখোশ হয়েছেন তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্বামীর এমন বক্তব্য খুবই অগ্রহণযোগ্য ও অশোভন। তিনি যে ট্রাম্পকে চেনেন, তার সঙ্গে এমন বক্তব্য মেলে না। তবে স্বামীর এসব মন্তব্যের সমালোচনার পাশাপাশি মেলানিয়া তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্যও আহ্বান জানান।  মেলানিয়া বলেন, তিনি যেভাবে স্বামীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, জনগণও যেন সেভাবে তাকে ক্ষমা করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের কল্যাণের কথা ভেবে ট্রাম্পকে ক্ষমা করা উচিত। কারণ ট্রাম্প মনেপ্রাণে একজন নেতা।

সর্বশেষ খবর