মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রহস্যমানব আবদুর রহমান

মিথ্যা তথ্যে জঙ্গিদের এনআইডি ও পাসপোর্ট

সাখাওয়াত কাওসার

রহস্যমানব আবদুর রহমান

পাসপোর্ট ও একটি ড্রাইভিং লাইসেন্সে নাম আবদুর রহমান, আরেক ড্রাইভিং লাইসেন্সে তিনি নাজমুল হোসেন, আবার হারবাল চিকিৎসালয়ের পরিচয়পত্রে তার নাম মাহাতাব হোসেন

একেক সময় একেক নাম। পরিচয়েও ছিল বহুমাত্রিকতা। কখনো গাড়িচালক, কখনো ওষুধ কোম্পানির বিপণন ব্যবস্থাপক। নাম ছিল আবদুর রহমান, কখনো নাজমুল হোসেন আবার কখনো বা মাহতাব হোসেন। তবে অবাক করা তথ্য হলো, আবদুর রহমান নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার ঠিকানা ছিল সাতক্ষীরা সদর। ইউনিয়ন ও গ্রাম : কুশখালি। বাবার নাম আবদুল্লাহ। মা রাজিয়া খাতুন। স্ত্রী শাহ্নাজ পারভীন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর-১৯৮৬৮৭১৮২৭৪১০১৬৯২। নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসছে এই এনআইডির যাবতীয় তথ্য। এই এনআইডি ব্যবহার করেই আবদুর রহমান বাগিয়ে নিয়েছিলেন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া পাসপোর্টটির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টে উল্লিখিত ঠিকানায় ব্যাপক অনুসন্ধান করেও এর সত্যতা পায়নি র‌্যাব-পুলিশ। অন্যদিকে, গাজীপুরে নিহত সাত জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ছবি দেখে কেউ তাদের পরিচয় নিশ্চিত হলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় সাভারের আশুলিয়ার জঙ্গি আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় পরে মৃত শীর্ষ জঙ্গি আবদুর রহমানের ব্যাপারে এরই মধ্যে অনেক তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। আস্তানা থেকে নাইটভিশন বাইনোকুলার, আন্ডারওয়াটার ক্যামেরা, মোবাইল জ্যামার, ২০ রাউন্ড গুলিসহ পিস্তল, ৩৫ লাখ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই এবং বিস্ফোরক জব্দের পর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এবং বিদেশে উগ্রপন্থায় জড়িয়েছেন এমন ব্যক্তিদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল রহমান। রহমানের মতো করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ধোঁকা দিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রকৃত এনআইডি সংগ্রহ করেছিল জঙ্গিরা। সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন অলিখিত নির্দেশনাই ছিল। এর বাইরে নব্য জেএমবির অন্যতম অর্থ সংগ্রাহকের ভূমিকা পালন করত রহমান। এরকম অনেকগুলো উেসরও সন্ধান পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেক বড় মাপের জঙ্গি ছিল রহমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধোঁকা দেওয়ার মানসেই সে একাধিক পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল। যেসব উৎস থেকে সে অর্থ সংগ্রহ করত এর কয়েকটি সম্পর্কে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রহমানের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, রহমানের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন তার স্বামীর বাড়ি সম্পর্কে একেক সময় একেক কথা বলছে। একবার বলেছিল সাতক্ষীরা, কিছু সময় পর বলছে বগুড়ার দুুপচাঁচিয়ায় সর্বশেষ বলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর। শাহনাজের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি , সেও গত ৬-৭ বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। রহমানের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টিও শাহনাজের পরিবার জানে না বলে দাবি করছে তারা। তবে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত একটি ড্রাইভিং লাইসেন্সে এই রহস্যমানবের নাম ছিল মো. নাজমুল হোসেন। বাবার নাম- মৃত খয়বর আলী। জন্মতারিখ-১৯৭৯ সালের ৭ জুলাই। ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া এই পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। লাইসেন্স নম্বর ডিকে-০০১৮৯৩ এলসি ০০০৯৪। আশুলিয়ার ‘আবিআর কেমিক্যাল অ্যান্ড ফুড কোম্পানি’র বিক্রয় ব্যবস্থাপক হিসেবে তৈরি করা আইডি কার্ডে তার নাম ছিল মাহতাব হোসেন। যোগদানের তারিখ ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল। আবার বিআরটিএ থেকে সংগৃহীত অপর একটি ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্সে এই রহস্যমানবের নাম ছিল আবদুর রহমান। বাবার নাম- আবদুল্লাহ। জন্মতারিখ-১৯৮৬ সালের ২২ জুন। চলতি বছরের ৭ মার্চ ইস্যু হওয়া এই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল ২০২৬ সালে ৬ মার্চ পর্যন্ত। লাইসেন্স নম্বর ডিকে-০৪৬২৯৪৯ সিএল০০০০।

রহমানের স্ত্রী রিমান্ডে : আবদুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমিকে দুই মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার বিচারিক হাকিম শাহিনুর রহমান এ আদেশ দেন। ঢাকা জেলা পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. আসাদুজ্জামান আসাদ সাংবাদিকদের জানান, রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি শাহনাজ আক্তার রুমির জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

র‌্যাব সূত্র বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সংঘটিত সবগুলো টার্গেটেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল রহমান। ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই বাসাটি ভাড়া নিলেও সেখান থেকেই অতি গোপনে টার্গেট বাস্তবায়ন করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাহনাজ পারভীন একেক সময় একেক কথা বললেও তার গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। সে অন্তঃসত্ত্বা। সাত বছর আগে রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। রহমানের আগের স্ত্রীর দুই সন্তান তাদের সঙ্গে বসবাস করে। নব্য জেএমবির সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবদুর রহমানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো বলে জানিয়েছে শাহনাজ। অর্থ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে অর্থ ব্যয়সহ সব যাবতীয় বণ্টন এবং হিসাব তার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। সব অপারেশনসহ অন্যান্য যাবতীয় অর্থের ব্যয় কোথায় কখন হবে কীভাবে হবে এবং কোন কোন মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করতে হবে এর নির্দেশনাও আসত আবদুর রহমানের কাছ থেকে।

৯ জঙ্গির লাশ মর্গে

এদিকে গাজীপুরে নিহত ৯ জঙ্গির লাশ গতকাল বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ গতকাল বিকালে এ তথ্য জানান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর