শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জিনপিংয়ের সফর নতুন যুগের সূচনা

------প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অন্যান্য খাতে নিবিড় সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা হবে। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্ব বোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের এ সফর দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও গুরুত্ব বহন করবে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে গত মঙ্গলবার এই স্বাক্ষাৎকার দেন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-চীনের সুদৃঢ় বন্ধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও চীন পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সুপ্রতিবেশীসুলভ মনোভাব, পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং পরস্পরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়। তিনি এক-চীন নীতি এবং চীনের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, দেশটির সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বেইজিংয়ের নেওয়া পদক্ষেপের ব্যাপারে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, চীন এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার এবং আমরা চীনকে আমাদের স্বপ্ন অনুধাবনে বিশ্বস্ত অংশীদার বলে মনে করি। বিনিয়োগ, পুঁজি এবং কারিগরিবিষয়ক আমাদের বড় বড় অনেক প্রকল্পে চীন এখন       নেতৃত্ব দিচ্ছে।

খালেদা চুরি করে আদালতে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন : জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার কোনো মিথ্যা মামলা দেয়নি। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই নিজের ব্যক্তিগত দুর্নীতি এবং আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা সম্পর্কিত। তিনি এতিমদের টাকা চুরি করে আদালতে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছেন। তার যদি সৎ সাহস থাকে, বুকে যদি বল থাকে তাহলে এগুলোকে ‘মিথ্যা’ বলে বিদেশিদের কাছে অহেতুক নালিশ না জানিয়ে আদালতে এসে মামলাগুলো যে মিথ্যা তা প্রমাণ করুক। বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতে এসে প্রমাণ করুন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেননি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার হুকুমের আসামি নন।

শ্রমিক লীগ সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সহসভাপতি ও নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগ শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ দেখি এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকজন বলে তাদের নামে নাকি মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। আপনারা (বিএনপি নেতৃবৃন্দ) আদালতে এসে প্রমাণ করুন, কোনটা মিথ্যা মামলা। মামলা সত্য না মিথ্যা সেটা আদালতে গেলেই (মামলা ফেস করলে) বোঝা যাবে। আপনারা কোর্টেই যেতে চান না, কনটেস্ট করতে চান না। আদালতে গিয়ে মামলা ফেস করতেই সাহস পান না। যার একটাই কারণ—এতিমের টাকা তো তিনি চুরি করেছেন। আর এই যে এতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন। তার হুকুমের আসামি তো তিনিই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারবে আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হবে না? কত আহ্লাদের ব্যাপার। অবশ্যই মানুষ পুড়িয়ে মারার বিচার হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্যই তো আসলে তারা এত মানুষ খুন করেছে। জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে রাজাকারদের গাড়িতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। যারা এদের মন্ত্রী করেছেন, জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে, তাদের বিচারও এই বাংলার মাটিতে হবে। তিনি বলেন, ঐ সব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী ও ভোট চুরি করে এমপি বানানোতেই পরে দেশে ধর্মের নামে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার মতো অপরাধ সংঘটিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের অনেকেই আজকে বড় বড় কথা বলেন। অথচ আমরা দেখেছি—২০০১ সাল থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইদের যত রকম মদদ দেওয়া, শেল্টার দেওয়া, এমনকি অপরাধ সংঘটনের পর নিরাপদে পালাবার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পাহারা দেওয়া—সবই তারা করেছে।

দুর্যোগকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে : রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল দুপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান দুর্যোগ মোকাবিলায় তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলার পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, যে কোনো দুর্যোগকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। ঝড়-ঝাপটা আসবেই এবং সেটা মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আল্লাহর রহমতে এখন বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের জনগণ সদাপ্রস্তুত থাকবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একটিই পথ—বাংলাদেশকে সবুজ বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে ফেলা। প্রধানমন্ত্রী জানান, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র এলাকায় পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বজ পাত থেকে রক্ষায় তালগাছ লাগানোর ওপর জোর দেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বক্তব্য দেন। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শফিউল আলম দুর্যোগ পূর্ববর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পদক্ষেপ এবং গাইবান্ধার ফুলছড়িতে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাসুদা খাতুন তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে নবনির্মিত ১০০ ঘূর্ণিঝড় এবং ৫৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

সর্বশেষ খবর