শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চালু হচ্ছে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং

সঞ্জয় কুমার দাস, পটুয়াখালী

চালু হচ্ছে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং

সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনে চলছে শেষ মুহূর্তে কর্মযজ্ঞ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সুবিধাসহ নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে গোটা দেশ। কক্সবাজারে প্রথম স্থাপিত সাবমেরিন স্টেশনের চেয়ে পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন প্রকল্পটি প্রায় আট গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন। এটি চালু হলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নেটওয়ার্ক দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। প্রথম প্রকল্পটির লাইফ টাইম শেষে দ্বিতীয় প্রকল্প দিয়েই পুরো দেশে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মাইটভাঙ্গা এলাকায় প্রকল্পটির কাজ শেষ করে শিগগিরই চালু করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাবমেরিন কেবল টেলিযোগাযোগ বিভাগের আঞ্চলিক প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মনন আশরাফ জানান, দেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে কক্সবাজারে একটি মাত্র সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে দেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সাবমেরিন স্টেশনটির কেবল

লাইন কাটা পড়লে বিএসসিসিএলের কাছে নেটওয়ার্ক সরবরাহের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাহকদের প্রায়ই বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে কক্সবাজারে নির্মিত ২০০ জিবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেশনটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে পটুয়াখালীর স্টেশন গোটা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করতে পারবে। প্রকল্প পরিচালক জানান, কুয়াকাটায় মাইটভাঙ্গা গ্রামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ১০ একর জমির ওপর ৬৬০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ। সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল লাইন এসে এখানে সংযুক্ত হবে। কুয়াকাটার স্টেশন থেকে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরত্বে উপকূলের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে আসা লাইনটির সঙ্গে স্টেশনকে যুক্ত করেই চালু করা হবে দ্বিতীয় সাবমেরিন প্রকল্প। নভেম্বরে স্টেশনটি চালু করার কথা থাকলেও তা চালু হবে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের চূড়ান্ত কাজ শুরু করার পর বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা বন্ধ রাখা হয়।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম তাওহিদুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন চালু হলে তার শুভফল শুধু ইন্টারনেট ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রসারণের জন্য দেশে উন্মুক্ত হবে নতুন দিগন্ত। বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে বাংলাদেশ। বহির্বিশ্বের নামকরা যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ক্লাসে শিক্ষকদের পাঠদান (লেকচার) ঘরে বসেই সরাসরি দেখে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী সম্প্রতি কুয়াকাটায় প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, শুধু ইন্টারনেট নয়, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্টেশন চালু হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে দেশের একটি নিবিড় বন্ধন তৈরি হবে। এ ছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতি সাধনের পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।

সর্বশেষ খবর