শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

তামিমের সেঞ্চুরির পরও এ কী বিপর্যয়!

মেজবাহ্-উল-হক

তামিমের সেঞ্চুরির পরও এ কী বিপর্যয়!

শতক হাঁকানোর পর তামিম —রোহেত রাজীব

তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের ব্যাটিংকে যদি সুরভিত প্রস্ফুটিত গোলাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়, দলের বাকি ৯ ক্রিকেটারের ব্যাটিং অবশ্যই কুিসত ‘র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডি’! বিশ্বের সবচেয়ে বড়, কিন্তু গন্ধহীন বিশ্রী এক ফুল। ৯ ব্যাটসম্যান র‌্যাফেলশিয়া আরনল্ডির মতোই নিজেদের কুিসত ব্যাটিং প্রদর্শন করেছেন গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। তামিম ও মুমিনুল মিলে যেখানে করেছেন ১৭০ রান, সেখানে দলের অন্য ৯ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল মাত্র ৪০! অতিরিক্ত থেকে এসেছে ১০ রান, এ নিয়ে ২২০।

যদিও দিন শেষে ইংল্যান্ডও মাত্র ৫০ রান করতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন তাতে আক্ষেপ করারও সুযোগ নেই। এক উইকেটে ১৭১ রান থেকে ২২০ রানে অলআউট। শেষের ৪৯ রান করতেই কাল বাংলাদেশ হারিয়েছে ৯ উইকেট। টেস্টে কোনো যুক্তি দিয়েই এই ব্যর্থতাকে আড়াল করার উপায় নেই। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু হয়েছিল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। দলীয় এক রানের মাথায় দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস আউট। কিন্তু ইমরুলের উইকেট পতনের পর দলে একটুও আঁচড় লাগতে দেননি দুই ব্যাটসম্যান তামিম ও মুমিনুল। দুজনে অপরাজিত থেকেই প্রথম সেশন শেষ করেছেন। দ্বিতীয় সেশনও দারুণভাবে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তামিমের সেঞ্চুরির পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বালুর বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইনআপ। তামিম ১৩৯ বলে করেন ১০৪ রান। মুমিনুল খেলেন ৬৬ রানের ইনিংস। অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পরও তামিম সেঞ্চুরির পর মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। সে কারণেই কিনা অফ-স্টাম্পের ওপরে থাকা বলে ব্যাট দিয়ে ডিফেন্স না করে এগিয়ে দেন পা। আউট! রিভিউ নিয়েও রক্ষা পেলেন না তামিম। মুমিনুল যে বলে আউট হয়েছেন তার করার কিছুই ছিল না। হয়তো সেটিই ছিল মঈন আলীর দিনের সেরা বল। কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এরপর দিনটিই নিজের করে নিলেন ইংলিশ এই স্পিনার। একাই নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।

তামিম ও মুমিনুলের পর দিনের সবচেয়ে বড় উইকেটটি নিয়েছেন মঈন। ৫০তম ম্যাচে টাইগার ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিমকে দুই অঙ্কের কোটাও ছুঁতে দেননি। তিনটি বড় উইকেটের সঙ্গে ফ্রি হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির উইকেট দুটিও পেয়েছেন। একসঙ্গে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয়েছে মিরাজ ও রাব্বির। ব্যাট হাতে দুই ম্যাচেই তারা ব্যর্থ। তবে গতকাল আউট হওয়ার পর দুজনের নামের পাশেই একটি ম্যাজিক ফিগার দাঁড়িয়ে গেছে। তিন ইনিংসে মিরাজের স্কোর ১, ১, ১! রাব্বির স্কোর ০, ০, ০! গতকাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমানকে রিভার্স সুইং দিয়ে বোকা বানিয়েছেন বেন স্টোকস। চট্টগ্রামে ভালো ব্যাটিং করা সাব্বির কাল রানের খাতাই খুলতে পারেননি আর রিয়াদ আউট হয়েছেন অপয়া-১৩-তে। সাকিব ও শুভাগত ওয়াকসের শিকার। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার খেলেছেন ১০ রানের সংগ্রামী ইনিংস, আর হঠাৎ সুযোগ পাওয়া শুভাগত ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। কাল বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। দিনের প্রথম সেশনে এক উইকেটে ১১৮ রান দেখে যদি মনে করেন টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ পরিপক্বতার প্রমাণ দিয়েছে, তবে দ্বিতীয় সেশনে ৮৭ রানে পাঁচ উইকেটের পতন এবং তৃতীয় সেশনে ১৫ রানে চার উইকেটের পতন দেখে মনে হবে ‘অবুঝ শিশু’ ছাড়া আর কিছু নয়!

সর্বশেষ খবর