শিরোনাম
শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
পজেটিভ বাংলাদেশ

ইলিশ উৎপাদনে প্রথম

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ইলিশ উৎপাদনে প্রথম

পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। শুধু প্রথমই নয়, প্রতিবছর ইলিশ রপ্তানি করে আয় হচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপিতেও অবদান রাখছে ১ শতাংশ। আর এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে সুস্বাদু এই ইলিশ উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সবার নাগালেই থাকবে। বাংলাদেশের পরই ইলিশ উৎপাদনে যথাক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। এ ছাড়া ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ১০টি দেশেই ইলিশ উৎপাদন কমেছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন প্রতিবছর ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইলিশ শুধু বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বিএফআরআইর মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মা-ইলিশ ও জাটকা সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ফলে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এখন বাংলাদেশের ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল অনেকাংশে অনুসরণ করছে। তিনি জানান, স্বাদে ও গন্ধে বাংলাদেশের অতুলনীয় ইলিশ উৎপাদন সাম্প্রতিক সময়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএফআরআই বলছে, সুস্বাদু এ মাছটি একসময় দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীতে পাওয়া যেত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় নদীতে পলি পড়ে ইলিশের অভিপ্রয়াণ পথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, অবাধে জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনে এবং নদীদূষণসহ অন্যান্য কারণে ইলিশের উৎপাদন আশির দশকের গোড়ার দিকে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে থাকে। সেই থেকেই বছরের পর বছর নিরলস ও শ্রমলব্ধ গবেষণায় বিএফআরআইর বিজ্ঞানীরা জাটকার বিচরণক্ষেত্র, ইলিশের প্রজননক্ষেত্র ও প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত করেন। পরে গবেষণার মাধ্যমে ইলিশ ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন করে বিএফআরআই। গবেষণার ফলস্বরূপ বন্ধ হয় পাঁচটি অভয়াশ্রমে জাটকা এবং প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশ আহরণ। আর এ কৌশলকে বাস্তবে রূপ দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশ শুধু আমিষের চাহিদাই মেটায় না জানিয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণার ইলিশ বিশেষজ্ঞ আনিছুর রহমান বলেন, খাসি ও গরুর মাংসের চর্বি মানুষের শরীরে কলস্টেরল জমায়, রক্তের চাপ বাড়ায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অথচ ইলিশে ওমেগা-৩ নামের এক ধরনের তেল আছে, যা মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রয়েছে এসেনশিয়াল অ্যামাইনো এসিড, যা মানুষের শরীরে উৎপাদিত হয় না। আর কিছু খনিজ পদার্থ ও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে ইলিশে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার তথ্যমতে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখানদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও এ বছর ইলিশ পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশের আশার আলো হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে।

সর্বশেষ খবর