শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন

এসিড টেস্ট নারায়ণগঞ্জে

মাহমুদ আজহার, গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

এসিড টেস্ট নারায়ণগঞ্জে

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনকে ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে নিয়েছে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচনে বিজয়ী হতে দুই দলই সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও দলে তার প্রতিপক্ষ স্থানীয় প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সব ভেদাভেদ ভুলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। অন্যদিকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নেতাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য তৃণমূলের পাশাপাশি কেন্দ্রকে নির্দেশ দেন তিনি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দেশের বড় দুই দল অংশ নেওয়ায় নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। বর্তমান কমিশনের বিদায়মুহূর্তে তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে যেতে পারে কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। অতীতে স্থানীয় সরকারসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচনে তাদের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় এ সংস্থা যথেষ্ট বিতর্কিত হয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। প্রধান দুই দলের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি দল এতে অংশ নিচ্ছে। এখন পক্ষপাতমূলক ভূমিকায় না থেকে নির্বাচন কমিশন আর স্থানীয় প্রশাসনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা উচিত। এতে গণতন্ত্র উপকৃত হবে।’

সতর্ক আওয়ামী লীগ : এ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার যেন দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কেউ যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না হন অথবা নির্বাচনে কেউ নিষ্ক্রিয় না থাকেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের গণভবনে ডেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় নেতাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যে বা যারা কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাতে গণভবনে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে শামীম ওসমানকে কঠোরভাবে সতর্কবার্তা দিয়ে আইভীর সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সবাই অঙ্গীকার করেছেন যে তারা দলের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা সবাইকে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে দলে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে নিরসন হয়েছে। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরাও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে মাঠে নামব। বেশকিছু পরিকল্পনা আমাদের আছে। প্রচারণা শুরু হলেই তা বাস্তবায়ন করব।’ আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও অপপ্রচারের কারণে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী হেরেছিলেন। এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সতর্ক রয়েছি। তা ছাড়া দলে কিছুটা মতবিরোধ থাকলেও তা সভানেত্রী মিটিয়ে ফেলেছেন। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নামবেন।’

চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি : নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। সর্বশক্তি নিয়ে নেতা-কর্মীদের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার নেতাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দলীয় নেতাদের মতে, এনসিসি নির্বাচনে হার-জিৎ— দুটিতেই লাভ দেখছেন তারা। তারা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জিতবেন। এর প্রভাব পড়বে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর ভোট ডাকাতি হলেও তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানবে। এ নিয়েও পরবর্তীতে সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজপথ উত্তপ্ত করার ইস্যু তৈরি করা যাবে। কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় নারায়ণগঞ্জে যেতে পারেন বিএনপির সব সিনিয়র নেতা। দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মাঠেও নামতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে আজ নারায়ণগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা আগেও ভোটারবিহীন এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন বিএনপির সর্বশেষ ‘টেস্ট কেস’। ‘রকিব মার্কা’ নির্বাচন কতটা প্রহসনময় হতে পারে, জনগণকে তা দেখাতে চাই। আশা করি সরকার ও বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হবে। সরকারের চরিত্র ও মনমানসিকতার কোনো পরিবর্তন না হলে বুঝতে হবে, তাদের হাতে গণতন্ত্র আর নিরাপদ নয়। এ নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যেতে পারব।’ দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামলে ধানের শীষের প্রার্থীর বিজয় হবেই। নারায়ণগঞ্জের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করবেন, তত্ক্ষণাৎ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর