শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সারা দেশে বিক্ষোভ কঠোর নিরাপত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে বিক্ষোভ কঠোর নিরাপত্তা

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ। গতকাল জুমার নামাজের পর কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতে ইসলামসহ অন্য ইসলামী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। নির্যাতন বন্ধ না হলে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়া এবং আরাকানের মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী ৫ ডিসেম্বর ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এদিকে, মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যার প্রেক্ষাপটে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে প্রত্যেক জেলার পুলিশ সুপারদের। ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর আগেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আশপাশ সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। মতিঝিল বিভাগের পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারেক বিন রশীদ জানান, হেফাজত কর্মীদের বায়তুল মোকাররম থেকে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ কর্মসূচির কারণে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

লংমার্চের ঘোষণা হেফাজতের : মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধ না হলে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর হেফাজত। বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, রাখাইন রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিমদের অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বলছে। জ্বলছে মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতি। সন্ত্রাসী আক্রমণে-আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধসহ হাজারো মুসলিম। তারা বলেন, মুসলিমদের ওপর হামলার ব্যাপারে মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ রয়েছে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজত। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুরের মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। হেফাজত ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সভাপতিত্ব করেন।

দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই এক বিবৃতিতে পূর্ব ঘোষিত ৫ ডিসেম্বর ঢাকার মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি সফলের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিরীহ রোহিঙ্গা মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের একটুও দয়াবোধ হয়নি।

তরিকতের মতবিনিময় : মিয়ানমারে নির্যাতন বন্ধের দাবিতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে তরিকত ফেডারেশনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেয়। সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, মিয়ানমার সরকারের মুসলিম হত্যাকাণ্ড গণহত্যার শামিল। আগেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়িত করে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছিল। তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি এবং সব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও শান্তিকামী বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নির্যাতন বন্ধ না হলে মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও করবে আওয়ামী ওলামা লীগ। গতকাল সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি আল্লামা ইলিয়াস বিন হেলালী।

কলরবের মানববন্ধন : সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। কলরব পরিচালক রশিদ আহমাদ ফেরদৌসের নেতৃত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড ও ফেস্টুন হাতে শিশু-কিশোর শিল্পীরা অংশ নেয়। একই সময়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ আবদুর রহীম সাঈদ বলেন, মিয়ানমার মুসলমানদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে, নারী শিশুসহ মুসলিম নাগরিকদের নির্যাতন ও হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে তা কোনো বিবেকবান মানুষ সহ্য করতে পারে না। ইসলামী ছাত্রসেনা একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।  আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— চট্টগ্রাম : মিয়ানমারে মুসলিম শিশু-নারী নিধনের প্রতিবাদে জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলার প্রায় প্রতিটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী, বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব মঈনুদ্দিন রুহি, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল আন্দরকিল্লাহ থেকে জামাল খান পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। এ ছাড়া জাগ্রত জনতার নামে নগর ও জেলায় সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জোনায়েদ বাবুনগরী বলেন, মিয়ানমারে শিশু ও নারী হত্যায় আজ মানবতা কাঁদছে। আমাদের দাবি— রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশের দরজা খুলে দেওয়া হোক। আমরা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ইসলামী ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের সামনে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল বের করে। অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। নাফ নদে ভাসছে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমান। বিশ্ববিবেক নির্লিপ্ত নির্বাক। কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুসল্লিরা। তৌহিদী জনতা ব্যানারে উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় ও সফিপুর বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়ে কালিয়াকৈর-নবীনগর মহাসড়কের হাজীবাড়ি বাসস্ট্যান্ড ঘুরে পুনরায় চন্দ্রা ত্রিমোড়ে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে মুসল্লিরা ‘মিয়ানমারে হত্যা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই। বিশ্বের মুসলিম এক হও, ইসলামের শত্রুরা হুঁশিয়ার সাবধান, মুসলিমদের ওপর হামলা বন্ধ কর করতে হবে’ স্লোগান দেন। দিনাজপুর : রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দিনাজপুর জেলা শাখা। ময়মনসিংহ : হালুয়াঘাটে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুসল্লিরা বিপন্ন মানুষগুলোর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন। সিরাজগঞ্জ : বিদ্রোহীদের দমনের নামে রোহিঙ্গাদের হত্যা-বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ ও মুসলমানদের হেফাজত করার জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাজার স্টেশন মসজিদের সামনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। সুনামগঞ্জ : গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে এ মিছিল বের হয়। এর আগে এক সমাবেশে গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে দলের নেতারা। চকরিয়া : কক্সবাজারের চকরিয়ায় রোহিঙ্গাদের নৃশংস ও বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে জুমার নামাজ শেষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে মুসল্লিরা। এতে নেতৃত্ব দেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. ফারুক আজম, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা মোজাম্মেল, রিপন ও শরিয়ত উল্লাহ।

সর্বশেষ খবর