শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পাবনায় নিহত ৪

ফরিদপুর-কক্সবাজারে গুলিবিদ্ধ ৩ লাশ

প্রতিদিন ডেস্ক

পাবনায় গতকাল ভোররাতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতের গুলিতে একজন এবং ফরিদপুরে দুই দল ডাকাতের মধ্যে গোলাগুলির সময় দুজন নিহত হয়েছেন। পাবনা প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোরে ঈশ্বরদী উপজেলার জয়নগর ওয়াপদা গেট ও বড়ইচরা এলাকায় পৃথক দুটি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় চারজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। র‌্যাব বলছে, ঘটনাস্থল থেকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও ২টি ট্রাকসহ প্রায় ৪০০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব-১২ পাবনা ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বীণা রানী দাস বলেন, ভোর রাতে জয়নগর এলাকার বাদশা রাইস এজেন্সিতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ডাকাতি করছে—এমন সংবাদ পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হলে ডাকাত দল র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ৩ ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়। দলের অপর সদস্যরা চাল বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব তাদের পিছু ধাওয়া করে। এ সময় বড়ইচরা গ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে আবারও ডাকাতদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় ৬ ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয় এবং ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজন মারা যায়। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা সম্ভব হলেও অপর তিনজনের নাম-ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে নিহত ব্যক্তি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার কিসমতদৌলা গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে রুস্তম আলী (২৫)। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরের কাটনি গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. বাচ্চু মিয়া (৩৫), পঞ্চগর জেলার বোদা এলাকার কবিরুল ইসলামের ছেলে মো. মেহেদী হাসান (২৫), চাঁদপুর জেলার মতলর উপজেলার দক্ষিণ বড়ইচরা গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মো. হানিফ মিয়া। অপর একজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। বাদশা রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর হোসেন বাদশা বলেন, ‘পাশের একটি ময়দার মিলে ডাকাতরা রাত সাড়ে ৩টার দিকে প্রবেশ করে। তবে সেখানে তারা ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের এই মিলের নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত-পা বেঁধে রেখে মিলের মধ্যে ঢুকে দুটি ট্রাকে চাল বোঝাই করছিল। র‌্যাবের লোকজন এই এলাকায় আসলে তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়।’ চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চকরিয়ায় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতির সময় ডাকাতের গুলি ও পিটুনিতে আহত হয়েছেন দুই ব্যবসায়ী। একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ। ডাকাতি ও লাশ উদ্ধারের স্থান একই হওয়ায় হতাহতের ঘটনা এক সূত্রে গাঁথা কিনা—রহস্য উদঘাটনে তদন্ত করছে পুলিশ। জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধের পর মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে ফিরছিলেন ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন। তার ভাগিনা জুয়েল ও দোকানের ম্যানেজার শামসুল আলমও সঙ্গে ছিলেন। পৌরশহর থেকে ঘনশ্যাম বাজার এলাকায় তাদের মোটরসাইকেল পৌঁছলে মুখোশ পরিহিত ৪-৫ জন সশস্ত্র ডাকাত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের থামায়। তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আলাউদ্দিনের পকেটে থাকা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এ সময় জুয়েল ও শামসুল আলম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ডাকাতরা তাদের মারধর ও গুলি করে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরদিন সকালে ডাকাতি হওয়ার স্থানে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ওই লাশ উদ্ধার করলেও প্রথমে তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। বিকালে চিরিংগার পালাকাটা থেকে আত্মীয়স্বজন থানায় এসে লাশ শনাক্ত করলে মরদেহের পরিচয় মেলে। নিহত মমতাজ মিয়া চিংড়ি ঘেরসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকের কাজ করত বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন। এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম বলেন, থানা পুলিশের পাশাপাশি আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যা ও লুটের ঘটনা এক সূত্রে গাঁথা কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্লু পাওয়া গেছে। পুরো তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর জানানো যাবে। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দিতে দুদল ডাকাতের মধ্যে সংঘর্ষে দলের দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ ডাকাতকে আটক করেছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। গতকাল মধ্যরাতের পর এ ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির ঘটনায় নিহতরা হলেন, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মেছেরদিয়া গ্রামের মো. ওয়াহিদুজ্জামান (৩৫) ও রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আবুল কাসেম (৩৮)। মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, রাত তিনটার দিকে টহল পুলিশের দল উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দি নামক স্থানের একটি ইট ভাটার মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইট ভাটার দিকে এগিয়ে গেলে সেখানে দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান, একটি বিদেশি পিস্তল, কিছু গুলি ও কয়েকটি রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ভোরে ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা হলো মধুখালী উপজেলার লুত্ফর (২৪), রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির রিয়াজুল (২৬), ভাদু শেখ (৪০), কুষ্টিয়ার কালুখালী উপজেলার সোহেল শেখ (২৪), আসলাম (২৬), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার রবিউল (৩৫)। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আশিষ কুমার সাহা জানান, ভোরে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে নিয়ে আসে। তবে তারা অনেক আগেই মারা গিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর