শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

রপ্তানি হয় নারীর চুলও

ক্রেতা চীন জাপান ভারত ভিয়েতনাম

রুহুল আমিন রাসেল

রপ্তানি হয় নারীর চুলও

‘চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের  পর/ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়াছে দিশা’— কবি জীবনানন্দ দাশের এমন পঙিতমালা কিংবা ‘দেব খোঁপায় তারার ফুল’র মতো বিখ্যাত গানে আলোচিত নারীর চুল। প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ কিংবা শিল্পীর রং তুলিতে নারী কেশের চিত্রায়নও অমূল্য। তবে বাস্তবে বাংলাদেশের নারীর চুলও দামি। প্রতিবছরই বাড়ছে রপ্তানি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামগঞ্জে জনপ্রিয় চুলের ব্যবসা। এই চুল বিশ্বের আটটি দেশে রপ্তানি হওয়ার তথ্য দিয়েছে ইপিবি। জানা গেছে, নারীদের মাথা থেকে ঝরে পড়া চুল রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নারীরা চুল আচড়ানোর পরে ফেলে দেন না। যত্ন করে চুল গুছিয়ে রাখেন বিক্রির জন্য। গ্রামের ফেরিওয়ালারা চুল কেনাকে আরও বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন এখন। তারা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে চুল কিনছেন। এ জন্য দেশের বহু স্থানে চুলের ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ১০ হাজার কেজি চুল বিকিকিনি হয়। অর্থাৎ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার কেজি চুল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা হয় দেশীয় বাজারে। এই ব্যবসা প্রসারে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসছেন। এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে গ্রামীণ নারীর। রপ্তানি উন্নয়ন বুর্যোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে সাম্প্রতিককালে চুল রপ্তানি হচ্ছে— চীন, জাপান, ভারত, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে। এসব দেশে চুলের তৈরি পণ্যের চাহিদা আছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ মার্কিন ডলার মূল্যের চুল রপ্তানি হয়েছে। যা বাংলাদেশি টাকায় এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯২ টাকা। প্রতি বছর চুলের রপ্তানি বাড়ায়, আগামীতে এই খাত সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে বলে মনে করে সরকার। এ প্রসঙ্গে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাফরুহা সুলতানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে চুলের কাজ হচ্ছে। এই খাত এত দিন সম্প্রসারিত না হলেও, এখন প্রসারিত হচ্ছে। রপ্তানিও বাড়ছে। তবে নতুন হিসেবে সম্ভাবনা আছে। বিশ্বে সত্যিকার চুলের চাহিদা বাড়ছে। জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চুল ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। শুধু চুল বিকিকিনির জন্য নওগাঁতে হাটও বসে। বিশ্ববাজারেও বাংলাদেশি চুলের ভালো চাহিদা আছে। বিদেশে এসব চুল ক্যাপ তৈরি ও টাক মাথায় হেয়ার প্লান্টেশনসহ আরও নানা কাজে ব্যবহূত হয়। চীনারা এই চুল দিয়ে বিভিন্ন ফ্যাশনের পরচুলা তৈরি করছেন। এই পণ্যের চাহিদা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যাপক আকারে বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চুল সংগ্রহ করে বাছাই করে। এরপর তাতে তেল মাখিয়ে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয়। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী— তিনটি পর্যায়ের গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। এই চুল বাছাই প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধাপে নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই ব্যবসায় ভালো অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। চুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে দুই রকমের চুল রপ্তানি হয়। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী গ্রেডিং করা হয়। প্রতি কেজি চুলের দাম ৭ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তবে এক কেজি চুল প্রক্রিয়াজাতকরণের পর হয় ৬০০ গ্রাম। তবে প্রতিকেজি চুল কত মূল্যে রপ্তানি হয়, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন দেশের চুল রপ্তানিকারকরা। কিন্তু বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি চুলের বিশেষ কদর আছে বলে মনে করেন তারা।

সর্বশেষ খবর