সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কাঁদছে কিউবা

দেশজুড়ে পথে পথে ঘুরবে ফিদেলের দেহভস্ম

প্রতিদিন ডেস্ক

কাঁদছে কিউবা

কিউবা হারিয়েছে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে, বিপ্লবীকে। তার শোকে কাঁদছে গোটা দেশ। ফিদেল কাস্ত্রো চলে যাবেন এটা কিউবানদের জানাই ছিল। তারপরও তারা তাদের এই নেতাকে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। তাই তো অনেকে বুক চাপরে কাঁদছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে চলছে ৯ দিনের শোক। সারা দেশে জাতীয় পতাকা রয়েছে অর্ধনমিত। ফিদেলের ভাই বতর্মান দেশটির প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো জানান, ফিদেলের            শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে শনিবারই দাহ করা হয়েছে। পরে তার দেহাবশেষ দেশজুড়ে ভ্রমণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু কিউবা নয়, শনিবার ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুর সংবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয় এক আলোড়ন। শুধু কিছু মার্কিন নেতা ছাড়া বিশ্বের বাঘা বাঘা  নেতা মহান এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। আগামী ৪ ডিসেম্বর তার দেহাবশেষ সমাহিত করা হবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সান্তিয়াগো ডি কিউবায়। এর আগে হাভানায় ধারাবাহিকভাবে তার স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময়ে তার দেহাবশেষ বহন করা হবে ক্যারাভান অব ফ্রিডম রুট দিয়ে। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি এ রুটেই যাত্রা করেছিলেন। বিবিসির সাংবাদিক উইল গ্রান্ট তার রিপোর্টে বলেছেন, হাভানা কাঁদছে। ওয়াশিংটনের গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করেছিলেন যে নেতা তাকে হারিয়ে মানুষ যেন দিশাহারা। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি ২০০৮ সালে রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটান। ক্ষমতা তুলে দেন তারই ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোর হাতে। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও তাকে হত্যাচেষ্টা উপেক্ষা করে ফিদেল কাস্ত্রো তার কমিউনিস্ট বিপ্লব অব্যাহত রেখেছেন। আমেরিকার মৃত্যুচক্ষু উপেক্ষা করে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেশ চালানো নেতা ফিদেল। তাই তো কিউবানরা প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে বলছে ‘আমিই ফিদেল কাস্ত্রো, ফিদেলের মৃত্যু নেই’।

শোকের ৯ দিন যেমন থাকবে কিউবা : পথে পথে মোড়ে মোড়ে চলছে সমাবেশ। কিন্তু আয়োজন নেই কোনো কনসার্টের। এই ৯ তিন থাকছে না কোনো উন্মাদনা। মদ বিক্রিও বন্ধ। মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাজধানী হাভানার হোসে মার্তি মেমোরিয়ালে ২৮ ও ২৯ নভেম্বর তার ভস্ম রাখা হবে। ২৯ তারিখ বিকালে হাভানায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এর পরদিন থেকে শুরু হবে কাস্ত্রোর ভস্মের  দেশব্যাপী যাত্রা। ওই যাত্রার ইতি টানা হবে সান্তিয়াগোর সান্তা ইফিজেনিয়া সমাধিস্থলে। ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় কাস্ত্রোকে সমাধিস্থ করা হবে। এখানেই শায়িত আছেন কিউবার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হোসে মার্তিসহ কিউবা বিপ্লবের বহু কাণ্ডারি। ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে ১৯৫৯ সালে কিউবার মাটিতে সূচিত হয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সামরিক শাসক জেনারেল বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরের পাঁচ দশক কিউবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। কিউবাকে ‘সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ ঘোষণা করেন ফিদেল। যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের অবকাশ যাপনের বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে থাকা দেশটিকে রূপান্তর করেন সমৃদ্ধ ভূমিতে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ‘একনায়ক’ হলেও ফিদেল সারাবিশ্বে সমাজতন্ত্রের পথের সংগ্রামীদের কাছে তিনি বীরবিপ্লবী। কিউবার অধিকাংশ মানুষ দেশকে  দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নায়ক হিসেবে  দেখেন ফিদেলকে। বিবিসি, গার্ডিয়ান, এএফপি।

সর্বশেষ খবর