সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের জরুরি অবতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাঙ্গেরি সফরে রওনা হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সেটিকে গতকাল তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে কয়েক ঘণ্টার জন্য জরুরি অবতরণ করতে হয়। ত্রুটি মেরামত শেষে বিমানটি আবার গন্তব্যে রওনা হয়।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আশখাবাদ বিমানবন্দরে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ত্রুটি মেরামতের পর একই ফ্লাইটে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের উদ্দেশ্যে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী।

 অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে বুদাপেস্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে লন্ডন থেকে বিমানের আরও একটি উড়োজাহাজ আশখাবাদে পাঠানো হয়েছিল। সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ৯টা ১৪ মিনিটে ভিভিআইপি ফ্লাইট বিজি-১০১১ (রাঙা প্রভাত) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ ৯৯ জন যাত্রী ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। ওই ফ্লাইটে একজন ক্যাপ্টেন, ৪ জন ফার্স্ট অফিসার, ২০ জন কেবিন  ক্রু, ৪ জন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বিমান কর্মকর্তারা জানান, উড়োজাহাজের একটি ইঞ্জিনে ফুয়েল প্রেসার কমে যাচ্ছিল। এ কারণে তাত্ক্ষণিকভাবে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হিসেবে আশখাবাদে অবতরণ করতে হয়। সূত্র আরও জানায়, অবতরণের পর প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের ভিতরে। খবর পেয়ে তুর্কমেনিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাইমিরাত হোজামুহাম্মেদভ বিমানবন্দরে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অন্যদিকে চারজন প্রকৌশলী দ্বারা বে-এরিয়ায় পার্কিং করা অবস্থায় ত্রুটি মেরামত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জরুরি অবতরণের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের সব ঠিকঠাক ছিল। বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ২টার দিকে আমরা জানতে পারি বিষয়টি। পাইলট জানান, তারা কাছাকাছি কোনো বিমানবন্দরের খোঁজ করছেন। যেখানে ফ্লাইটটি জরুরি অবতরণ করবে। অবশ্য এর আগেই পাইলট প্রধানমন্ত্রীকে তার সিকিউরিটির মাধ্যমে বিষয়টি জানান। প্রায় ২০ মিনিট আকাশে ওড়ার পর পাইলট ঘোষণা দেন, সবচেয়ে কাছাকাছি বিমানবন্দর তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করছে। বেলা সোয়া ২টার দিকে নিরাপদেই ফ্লাইটটি অবতরণ করে।’ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসাদ্দিক আহমেদ জানান, ‘বোয়িং ৭৭৭’ এয়ারক্রাফটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণর করে। ত্রুটি সারিয়ে টেস্ট রান দেখে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে বিমানটি সবাইকে নিয়ে হাঙ্গেরির উদ্দেশে রওনা হয়। ঢাকার সময় রাত ১১টার দিকে ওই ফ্লাইট বুদাপেস্টে  পৌঁছায়। এ ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জানান, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৭৭ ফ্লাইট (রাঙা প্রভাত) বুদাপেস্ট যাওয়ার পথে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডাইভার্ট হয়ে ল্যাংডিং করে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে উড়োজাহাজটির মেরামতের কাজ চলে। চারজন ইঞ্জিনিয়ার দ্রুত উড়োহাজাজটির ত্রুটি সারার পর সেটি পুনরায় বুদাপেস্টের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে উড়োজাহাজটি ঠিক না হলেও সমস্যা ছিল না। লন্ডনগামী অপর একটি ফ্লাইটকে ডাইভার্ট করে তুর্কিমেনিস্তানে পাঠানো হয়েছিল। বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, ওই ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের শেষ সীমানায় পৌঁছার পর ক্যাপ্টেনের কাছে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটাই প্রথম সফর। তার এই সফরে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চারটি সমঝোতা স্মারকে সই হওয়ার কথা রয়েছে। সফর শেষে আগামী বুধবার সকালে দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

সর্বশেষ খবর