শিরোনাম
সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
নির্বাচন জমছে নারায়ণগঞ্জে

আচরণ লঙ্ঘন করেননি প্রধানমন্ত্রী, প্রচারণায় যেতে পারবেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ঘরোয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও এমপিরা অংশ নেওয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন বিএনপি প্রার্থী। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি।

এই নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (এনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানসহ আট জনের মনোনয়নপত্র বৈধ  ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার। আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৫ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। নির্বাচন আগামী ২২ ডিসেম্বর। ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, গণভবনে দলীয় বৈঠকে আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার কথা নয়। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঘরোয়া মিটিং হতেই পারে। তিনি বলেন, এ বৈঠক তো নির্বাচনী এলাকায় হয়নি। নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী-এমপিরা এ ধরনের বৈঠক করতে পারবেন না, প্রচারণা চালাতে পারবেন না।

সচিব জানান, দলীয় প্রধান হলেও বিএনপি নেত্রীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় কোনো বাধা নেই। তিনি (খালেদা জিয়া) এখন সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি নন। ফলে এ নির্বাচনের আচরণবিধি তার প্রচারণার জন্য অন্তরায় নয়। তবে বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে কোনো জনসভা, মিছিল, সমাবেশ, শোডাউনের সুযোগ নেই। শুধু পথসভা করা যাবে। সে সঙ্গে ঘরোয়া সভা করতে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে আগে অনুমতি নিতে হবে।

৮ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ : এনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাখাওয়াত হোসেন খানসহ আট জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার। তবে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। বৈধ প্রার্থীরা হলেন— আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস সোহেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, এলডিপির কামাল প্রধান, জাসদের (ইনু) মোসলেমউদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাসুম বিল্লাহ ও ইসলামী ঐক্য জোটের এজহারুল হক। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটারের স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। বাতিল হয়েছে ১০ জনের। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৭ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ও একজনের বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন বলে জানান রিটার্নিং অফিসার। নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্বাচনের পরিবেশ এখনো ভালো আছে। মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো কোনো অভিযোগ ওঠেনি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। এমন পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হবে না। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় মেয়র প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সেনাবাহিনী ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনে যেসব প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজ করবেন তাদের মধ্য থেকে দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে প্রত্যাহার করতে হবে। আইভীর পক্ষে আসা আইভীর মনোনয়নের প্রস্তাবক আবদুর রাশেদ রাশু জানান, মনে হয় না নির্বাচনে কোনো সমস্যা হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দরকার পড়বে বলে মনে করি না। গতবারের নির্বাচনের মতো এবারও সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা করছি। ইসির প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ভোটাররা ভোট দেওয়া নিয়ে এবং আমরা সঠিক ভোট গণনা নিয়ে শংকায় আছি। ইসিকে এই শংকা দুর করতে হবে।

এনসিসি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বৈঠক ১৪ ডিসেম্বর : এনসিসি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৪ ডিসেম্বও বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। অবাধ, সুষ্ঠু ভোট করার জন্য পরিস্থিতি বুঝে এ  বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল ইসির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আশা করছি, নারায়ণগঞ্জবাসী ও জাতি একটি ভালো নির্বাচন দেখবে। ভালো নির্বাচন করার জন্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৮টি দলের প্রার্থীরা মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোট হবে।  ডিসেম্বর থেকে প্রচারণা করতে পারবেন প্রার্থীরা। নির্বাচন পরিস্থিতি ভালো রাখতে বিএনপি প্রার্থী সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তা নাকচ করে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি মিলনায়তনে ১৪ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সচিব। তিনি জানান, নির্বাচনী এলাকায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে এ কার্যক্রম নেবেন। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও স্মার্টকার্ড বিতরণের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন ইসি সচিব। বাদ পড়া ভোটারদের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনী অফিসে গিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর