রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে আরও সতর্কতার দরকার ছিল

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে আরও সতর্কতার দরকার ছিল

মীর নাছির উদ্দিন

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক সতর্কতার দরকার ছিল। ভিভিআইপি ফ্লাইটের ক্ষেত্রে অন্তত তিন দিন আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে ‘ক্লিয়ারেন্স’ থাকা দরকার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে দায়িত্বপালন করে থাকে। কিন্তু এবার কী হলো বুঝতে পারছি না। মীর নাসির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক হাঙ্গেরি যাত্রাকালে তাকে বহনকারী বিমানের দুর্ঘটনার শঙ্কা প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন। সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী জানান, তার সময়কালে এ ধরনের ভিভিআইপি ফ্লাইটের আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদারকি করা হতো, ক্লোজডোর বৈঠক করে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হতো। তবে কি প্রধানমন্ত্রীর এই ফ্লাইটের সঙ্গে কোনো ষড়যন্ত্রের যোগ ছিল? —এমন প্রশ্নে সাবেক এই বিমানমন্ত্রী বলেন, তা তদন্ত কমিটিই ভালো বলতে পারবে। মীর নাসির উদ্দিনের মত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যর্থতা এবং লোকসানের পেছনে শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাব, মাথাভারি প্রশাসন, অতিরিক্ত ব্যয় ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তিনি বলেন, বিমানমন্ত্রীকে নিজের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী আর শ্রমিক ইউনিয়নের কাছে প্রিয় না হয়ে যাত্রীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে হবে। বিমানমন্ত্রী এয়ারপোর্ট বা দফতরে এলে টাউট ও দুর্নীতিবাজদের কেঁপে উঠতে হবে। তিনি জানান, তার নিজের দায়িত্বকালে অবস্থা ওরকমই ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাবেক বিমান পরিবহনমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে ফের বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন মীর নাসির। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বিমানকে ভালোই চালাতে পারবেন। উল্লেখ্য, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।  মীর নাসির উদ্দিন ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র। বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর জেলা শাখার সভাপতি, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, বিমানের গতিশীলতার জন্য প্রশাসনকে পুরোটাই তদারকির আওতায় আনতে হবে। সুইপার থেকে ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে জিএম ও এমডি পর্যন্ত সবাইকে তদারকির আওতায় আনতে হবে। মীর নাসির উদ্দিন বিমানের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বার বার ব্যর্থতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, সে দলের লোকেরাই বিমানের শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে। আর এই ইউনিয়নের কাছে সবাই জিম্মি। যে কোনো বড় পদক্ষেপে ইউনিয়ন অসম্মতি জানায়। আমার সময়েও আমি বিমানের হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার পদক্ষেপ নিলে এই শ্রমিক ইউনিয়নের বিরোধিতার কারণে তা হয়নি। এ ছাড়াও যিনি মন্ত্রণালয়ের কাণ্ডারি, তাকেও সার্বিক তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এখন অবস্থা দেখে মনে হয় তদারকি নেই। রানওয়ের পাশেই দেখা যায় কার্গো কন্টেইনার পড়ে আছে। এমন অবস্থায় যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মীর নাসির উদ্দিন জানান, তার সময়কালে রানওয়ের আশপাশে পরিচ্ছন্ন নিরাপদ অবস্থা ছিল এবং তিনি ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করতেন। তিনি বলেন, বিমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে ‘ভুতুড়ে শক্তি’ আছে। একে সোজা করতে হলে কঠোর মনোভাব নিয়ে তদারকি করতে হবে। সরকার প্রধানকে কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি খাতে হ্যান্ডলিং দেওয়ার জন্য ১৫ দিন বিমান বন্ধ রাখতে হবে। হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে নেই বলে এখন দেখা যায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এসেও সিঁড়ি না আসায় ৪৫ মিনিট যাত্রীরা নামতে পারেন না। দুর্ভোগে অলস বসে থাকতে হয়। শ্রমিক ইউনিয়নের প্রভাবে শ্রমিকদের দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন হচ্ছে। তার সময়কালে বিমানের ২৫ শতাংশ ব্যয় সংকোচন এবং নানা পদক্ষেপ নেন এবং তার সময়কালে ২০০৩ সালেই সর্বপ্রথম বিমান লাভের মুখ দেখে বলে জানান। ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ হিসেবে বিদেশে অপ্রয়োজনীয় লোকবল ছাঁটাই, হোটেল ব্যয় এবং পরিবহন ব্যয় কমানার মাধ্যমে নিজের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। এ ছাড়াও কার্গো ভিলেজ প্রতিষ্ঠা ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই, আবুধাবি ফ্লাইটে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে মাত্র ১ হাজার টাকায় যাত্রী পরিবহন শুরুর কথাও জানান তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে তার নিজের গৃহীত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখায় ধন্যবাদও জানান সাবেক এই মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা।

সর্বশেষ খবর