বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

উৎকণ্ঠা নিখোঁজদের নিয়ে

হঠাৎ উধাও সাত যুবক, মায়ের কাছে একজনের বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উৎকণ্ঠা নিখোঁজদের নিয়ে

রাজধানীর বনানী থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া চার তরুণকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে আরও তিন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ নিখোঁজ হওয়া ইমরান ফরহাদ (২০) মোহাম্মদপুর এলাকার কেয়ার মেডিকেল কলেজের ছাত্র। সাঈদ আনোয়ার খান (১৮) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর নেয়ামত উল্লাহ (১৬) বরিশালের আগৈলঝাড়ার একটি মাদ্রাসার ছাত্র। এ ঘটনায় থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। এর আগে গত ১ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে এক সঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হন। তারা হলেন, সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসাইন খান পাভেল, মোহাম্মদ সুজন ও মেহেদী হাওলাদার। এদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। গতকাল পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তবে চার তরুণের অবস্থান ও নিখোঁজ হওয়ার রহস্য জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পাশাপাশি, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, র‌্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে কাজ করছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিখোঁজ তরুণরা কাদের সঙ্গে মিশত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি কেমন ছিল আমরা এগুলো খতিয়ে দেখছি। এরা কীভাবে, কখন নিখোঁজ হয়েছে তা এবং কোথায় আছে তা জানার চেষ্টা চলছে। নিখোঁজ ইমরান ফরহাদের ফুফাতো ভাই আল-মামুন বলেন, ইমরান ফরহাদ মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্র। পরিবারের সঙ্গে সে মাটিকাটা এলাকার ১৪৫/এ নম্বর বাসায় থাকত। গত ২৯ নভেম্বর সকালে মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আল মামুন জানান, ‘প্রথমে তারা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছে ইমরানের খোঁজ করেন। ২ ডিসেম্বর তারা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তারা বুঝতে পারছেন না ইমরান আসলে  কোথায় গেছে বা তার কী হয়েছে। ইমরান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা সবাই ভেঙে পড়েছে।’ মামুন জানান, ইমরানের বাবার নাম আসাদুজ্জামান। তিনি প্রবাসী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। ইমরানদের পরিবার খুবই ধার্মিক। তবে তারা উগ্রপন্থা পছন্দ করেন না। ইমরান উগ্রপন্থি কোনো ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। এদিকে গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান সাঈদ আনোয়ার খান। মঙ্গলবার সাঈদের বাবা আনোয়ার সাদাত খান বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আনোয়ার সাদাত খান জিডিতে উল্লেখ করেছেন, তিনি পরিবার নিয়ে বনানীর বি ব্লকের ২১ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাসায় থাকেন। ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে নিখোঁজ হওয়ার আগে তার ছেলের পরনে কালো প্যান্ট ও কালো জ্যাকেট ছিল। তার উচ্চতা ছয় ফুট।

আমি আল্লাহর পথে চলে গেলাম : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাজ মাদ্রাসার নিখোঁজ ছাত্র নেয়ামতুল্লাহ (১৬) তার মায়ের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়েছে। ৩০ নভেম্বর রহস্যজনক নিখোঁজের তিন দিন পর ৩ ডিসেম্বর নেয়ামতুল্লাহ তার মা কোহিনুর বেগমের ০১৭৬৮-৪৬৪২৮১ নম্বরের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে লিখেছে : ‘মা, আমি ভালো আছি। আমার জন্য কোনো চিন্তা করবা না। আমি আল্লাহর পথে চলে গেলাম।’ এর পর থেকেই চরম উদ্বেগে পরিবারটি। সে উপজেলার বাকাল গ্রামের খোরশেদ বেপারির ছেলে।

এদিকে, এ ঘটনায় নেয়ামতুল্লাহর মাকে বরিশাল র‌্যাব-৮ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

আগৈলঝাড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, আল জামিয়াতুল নাফিজিয়া আল ইসলামিয়া মার্কাজ মাদ্রাসায় কওমি বিভাগে দুই বছর ধরে পড়াশোনা করছিল নেয়ামতুল্লাহ। ২৭ নভেম্বর বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যায় সে। সেখান থেকে ৩০ নভেম্বর জোহরের পর নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় নেয়ামতুল্লাহর বাবা ৩ ডিসেম্বর আগৈলঝাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নেয়ামতুল্লাহর মামা শাহাদাৎ হোসেন জানান, নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার ব্যবহূত ০১৯৯২-৫৭৪৪৭৩ নম্বরের মুঠোফোনে একাধিকবার রিং দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ করেনি সে। ফোন রিসিভের জন্য তাকে একাধিক খুদে বার্তা পাঠানো হয়। ওই বার্তা পেয়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহাদাতের ০১৭৫৯-৬৪৬৩৭২ নম্বরের মুঠোফোনে সোমবার রাত ১টা ২২ মিনিটে ০১৯৯২-৫৭৪৪৭৩ নম্বর থেকে একটি খুদে বার্তা পাঠায়। এতে বলা হয় : ‘আমি এখন ডিউটিতে আছি। পরে ফোন দেব।’ কিন্তু পরে আর কোনো ফোন আসেনি।

নেয়ামতুল্লাহর মা জানান, সোমবার দুপুরেও নেয়ামতুল্লাহ তার মুঠোফোন থেকে তার (কোহিনুর) মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলে, ‘মা, ক্ষমা করো, ভালো থাকো।’

কোহিনুর বেগম জানান, তার ছেলে খারাপ ছিল না। বাগধা মাদ্রাসায় পড়ালেখার সময় তার আচরণে অসংগতি দেখা দেয়। এরপর উপজেলা সদরের আল আমীন মোহাম্মদীয়া জামে মসজিদের ইমাম জলিল বেপারির মাধ্যমে ওই মসজিদে আজান দেওয়া, নামাজ আদায় ও তাবলিগ জামাতে যোগদান করে আসছিল নেয়ামতুল্লাহ। ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, নেয়ামতুল্লাহ নিখোঁজ হওয়ার পর দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরির তদন্ত চলছে। পুলিশের নজরদারিতে থাকা মসজিদগুলোয় তার যাতায়াত, নিখোঁজ রহস্য উদ্ঘাটন ও বর্তমান অবস্থান জানতে পুলিশের তৎপরতা চলছে।

সর্বশেষ খবর