শিরোনাম
বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম-ফেডের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় মামলা করবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে মামলার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা অ্যাগমন্ট গ্রুগ। এ ছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ-এপিজিও বাংলাদেশকে আইনি সহায়তা দেবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৫ ডিসেম্বর জাপানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখার জন্য। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেছে। দায়ও নেবে না বলেছে। এটা হয় না। তারাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। অর্থ ফেরত পেতে খুব শিগগিরই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে বাংলাদেশ। অর্থ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর জাপান সফর শেষে অর্থমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তার ফিরে আসার পর আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে মামলা করা হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। মামলায় শুধু অর্থ ফেরতই নয়, ক্ষতিপূরণও চাওয়া হতে পারে। অন্যদিকে ফিলিপাইন যে বাংলাদেশ সরকারের করা তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে তা দেওয়া হবে না। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ফিলিপাইনকে দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে অন্য কোনো সহায়তা চাইলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আদালতে মামলা করা হলে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এবং অ্যাগমন্ট গ্রুপের আইন ও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের খোয়া যাওয়া অর্থের পুরোটাই আরসিবিসির কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করে বাংলাদেশকে ফেরতও দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছিল ফিলিপাইন ও ফেডারেল রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করে, এই অর্থ দীর্ঘ সময় পর হলেও ফেরত পাবে বাংলাদেশ। কেননা আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি দেশ বা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভকে ব্যবহার করে এক ডলার মানি লন্ডারিং করলে তার কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় করা হবে। তবে সেটা তদন্ত এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার সরিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এই অর্থের মধ্যে ফিলিপাইনের আরসিবিসির চারটি হিসাবের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ফেরত পেয়েছে দেড় কোটি ডলার। বাকি সাড়ে ৬ কোটি ডলার উদ্ধারে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ফিলিপাইন সফর করে। ফিলিপাইনের গণমাধ্যম এ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) রিজার্ভ চুরির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেম এবং সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনোর কয়েকজন জাংকেট অপারেটরের বিরুদ্ধে অর্থ পুনরুদ্ধার (সিভিল ফোরফেইচার) মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে বাংলাদেশই সুবিধা পাবে। এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংগো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিন্স রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে আরসিবিসিকে ২ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক জরিমানা করেছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির এক ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোসহ ছয়জনকে বরখাস্তও করেছে আরসিবিসি।

সর্বশেষ খবর