বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওষুধশিল্পে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা

রুহুল আমিন রাসেল

ওষুধশিল্পে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা

একাত্তরে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ভঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থায় ওষুধপণ্য ছিল মানুষের কাছে সোনার হরিণের মতো। সেই যুদ্ধজয়ের ৪৫ বছর পর আজ বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের অভাবনীয় অগ্রযাত্রা খুলে দিয়েছে অপরিসীম সম্ভাবনার দুয়ার। এ দেশের ওষুধশিল্প আজ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় ওষুধশিল্পে। এ দেশে উৎপাদিত বিশ্বমানের ওষুধ এশিয়া, আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশের বাজার ছাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশে রপ্তানি হয়। দেশে বিগত ৪৫ বছরে ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রা মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির উপদেষ্টা ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমরা দেখেছি মানুষ ক্যাপসুল সেল নিয়ে এসে তার ভিতরে চীন থেকে আসা পেট্রা-সাইক্লিন পাউডার ভরে বিক্রি করেছে। বারান্দায় বসে সেই ক্যাপসুল তৈরি করা হতো। সেই ওষুধ মানুষ খেত। সে অবস্থা থেকে আজকে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, এ দেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১২০টি দেশে রপ্তানি হয়। এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না।’ স্বাধীনতার আগে এখানে উৎপাদিত ওষুধ স্থানীয় পর্যায়ের মাত্র ২০ শতাংশ চাহিদা মেটাত। বাকি ৮০ শতাংশ পশ্চিম পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। স্বাধীন বাংলাদেশ ওষুধের তীব্র সংকটে পড়লে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রিতে অনীহা দেখায়। দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় হাঙ্গেরি। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির ইগিস, গেইডেন রিখটার, কাইরন, মেডিমপেক্স কোম্পানি তখন বার্টার ট্রেডে বাংলাদেশে ওষুধ পাঠাতে রাজি হয়। বিনিময়ে বাংলাদেশ পাঠাত পাট ও অন্যান্য কাঁচা পণ্য। ১৯৮২ সালে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হয়। এর ফলে বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাণিজ্য থেকে দেশি শিল্প মুক্তি পায়। এতসব বাধার পাহাড় পেরিয়ে আজকের ওষুধশিল্পের গল্পটি ভিন্ন বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে। বর্তমানে এখানকার ২৫৭টি কোম্পানির কারখানায় বছরে ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদন হচ্ছে। এ শিল্পে প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশি ৪৬ কোম্পানির প্রায় ৩০০ প্রকারের ওষুধপণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় যেখানে ছিল ৪ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার, সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলার। ফলে এবার শুধু ওষুধ রপ্তানিতে বিশ্ববাজার থেকে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিশ্ববাজারের তুলনায় কম দামে উৎপাদন, গুণগত মান, উচ্চমানের ওষুধ প্রস্তুতকরণ, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের ক্ষেত্রে এই শিল্প অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে।

সর্বশেষ খবর