বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সার্বজনীন শিক্ষা নিম্নমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সার্বজনীন শিক্ষা নিম্নমানের

হোসেন জিল্লুর রহমান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার মানে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। নিম্নমানের সর্বজনীন শিক্ষা। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব, আগামী ১৫ বছরে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে অন্তত এক হাজার মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করুন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বজায় থাকছে কি না তা গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’ গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিসার্চিং এডুকেশন ২০৩০ : সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ও গণসাক্ষরতা অভিযান যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের আনাচেকানাচে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলার প্রবণতা শুরু হয়েছে। এসব ইউনিভার্সিটির নামগুলো আকর্ষণীয় হলেও কোয়ালিটি বলতে তেমন কিছুই নেই। গ্লোবাল র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো কোনো অবস্থানে নেই। তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটির অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত শুধু এসডিজি-৪ অর্জন করাই না, বরং রাজনৈতিকভাবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে সেগুলো মনিটর করা। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা নিয়ে বৃহৎ চিন্তা নেই। আমাদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বিরাট বাজেট ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু সেকেন্ডারি এডুকেশনের উন্নয়নে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যকরী চাহিদা থাকা দরকার। আবার অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রেও দরকার দায়িত্বশীল হওয়া।’ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব সময় আন্তরিক সরকার। কিন্তু সরকার চাইলেই সব সময় অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকসহ বিভিন্ন চাপ মোকাবিলা করতে হয় সরকারকে। তিনি বলেন, সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কোথায় কোন অর্থ ব্যয় হচ্ছে সে বিষয়ে সুশীল সমাজকে সচেতন হতে হবে। এতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যয় নিশ্চিত হবে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা খাতের অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ফলে এ খাতের ব্যয় ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে। নারীদের জন্য পৃথক সুবিধা নিশ্চিত করতেও বিশেষ মনোযোগী সরকার।  ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের দেশের বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ কম। এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে ধনীদের সম্পদে শিক্ষাকর আরোপ করা যেতে পারে।’ তিনি বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে এয়ার টিকিটের ওপর কর আরোপ করা যেতে পারে। ধনীদের সম্পদের ওপরও শিক্ষাকর আরোপ করা যেতে পারে। ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের অর্থের অপ্রতুলতা আছে এটা সত্য। মূলত বরাদ্দ ব্যয়ের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হলে অর্থ সংকটের সমাধান হবে। ব্যয়ে অদক্ষতার জন্য আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি।’ তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কোনো রকম সুপারিশ ছাড়া নিয়োগ দিতে পারলে যোগ্যরা শিক্ষকতা পেশায় আসবে। মূল প্রবন্ধে ড. মনজুর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের স্কুলগুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ন্ত্রিত। এতে শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।’ ড. মনজুর আহমেদ বলেন, দেশের ডিগ্রি কলেজগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। আর যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা শিক্ষকতায় আসতে চান না। এতে শিক্ষার মান ক্ষুণ্ন হয়। মূলত শিক্ষা খাতে সরকারের বাজেট অপ্রতুল বলেই এমনটা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর