মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লিটনের দাফন সম্পন্ন

বিক্ষোভ, রেল লাইনে বোমা সদৃশ বস্তু

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি

লিটনের দাফন সম্পন্ন

দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন এলাকাবাসীর শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শেষশয্যায় শায়িত হলেন। গতকাল বিকালে সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহাবাজ গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে মরহুমের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হয়। এর আগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে মরহুম লিটনের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ বিদায় জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, দলীয় সভানেত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ হুইপবৃন্দ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে হুইপ মো. নূরুল ইসলাম ওমর মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। জানাজায় রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব, সংসদের ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতারাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এরপর হেলিকপ্টারে মরহুমের লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আসর নিজ বাড়ির আঙিনায় তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। রবিবার রংপুর পুলিশ লাইনে এমপি লিটনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গাইবান্ধার নিজ বাসভবনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন এমপি লিটন। পরে রংপুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি দশম জাতীয় সংসদে গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি হয়েছিলেন। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, এমপি লিটনের লাশবাহী হেলিকপ্টারের অপেক্ষায় বামনডাঙ্গা আবদুল হক ডিগ্রি কলেজ মাঠে সকাল থেকেই ছিল উত্সুক জনতা ও দলীয় নেতা-কর্মীর ভিড়। কিন্তু বেলা সোয়া ১টায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারটি কলেজ মাঠে না নেমে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের পূর্ব পাশের একটি ফাঁকা মাঠে অবতরণ করে। এরপর মরহুমের লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার থেকে নামেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। এ সময় সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন প্রমুখ। সেখান থেকে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে মরদেহ সুন্দরগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে এমপির নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়। এ সময় সেখানে অপেক্ষমাণ স্বজন, প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। শ্রদ্ধা নিবেদন : এমপি লিটনের কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামে হাজারো মানুষের। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও নানা বয়সী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ সারিবদ্ধ হয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিচারের অঙ্গীকার : সমবেত শোকাতুর জনতার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। অপরাধী যারাই হোক তাদের শনাক্ত করতে পুলিশি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করি পুলিশ তাদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।’ এরপর গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ জেলা এবং সাত উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মরহুমের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন : সন্ত্রাসীদের গুলিতে এমপি লিটন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশন গতকাল আদালত চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। গাইবান্ধায় ট্রেনের নিচে বোমা : গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে একটি লোকাল ট্রেনের চাকার পাশে বোমাসাদৃশ বস্তু পাওয়া গেছে। এটি চোখে পড়ার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, বস্তুটি বোমা নয়। এতে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য ছিল না। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এটি ফেলে রাখা হয়। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল ইউনিট বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিচার দাবিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো আধাবেলা হরতাল কর্মসূচি চলছিল। এ অবস্থায় সকাল ৮টায় লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনটিকে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে আটকে দিয়ে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। পরে বেলা ১২টার দিকে রেল লাইনের পাতের উপরিভাগ ছুঁয়ে ট্রেনের চাকার পাশে বোমাসাদৃশ বস্তুটি দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলে থাকা গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল আলম তাত্ক্ষণিক বোমাসাদৃশ বস্তুটি উদ্ধার ও পরীক্ষার জন্য সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটকে খবর দেন। এ বিষয়ে বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক নাদিম মোস্তফা বলেন, বোমাসাদৃশ জিনিসটি এমনভাবে রাখা হয়েছিল, যেন ট্রেন চললেই তাতে চাপ পড়ে। বামনডাঙ্গা স্টেশন মাস্টার হাইয়ুল মিয়া বলেন, এ ঘটনায় লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। হরতাল পালিত : বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সময় এদিন এলাকার সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি সড়ক ও রেলপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কালো ব্যাচ ধারণ করেন।

কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ : এমপি লিটন হত্যার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ঘোষপাড়ার দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলীসহ দলীয় নেতারা। এ সময় খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর