মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এটা টোটাল গেমের অংশ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য লিটনের হত্যাকাণ্ডটি জঘন্য ও পরিকল্পিত। একটা টোটাল গেমের অংশ। এর প্লট আগে থেকেই তৈরি। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমপি লিটনের ওপর আনা পৃথক শোক প্রস্তাবের পর প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন ও আপিল  বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। চক্রান্তকারীরা আগে লিটনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, পরে হত্যা করেছে। অনেক দিন আগেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেটি ভালো ছিল, বিদেশে পড়াশোনা করেছে। জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও সে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। কয়েক মাস আগে গাইবান্ধায় এক শিশুকে গুলি করার ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, লিটনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্যই শিশুর পায়ে গুলি করার ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ওই সময় সে যে আক্রমণের শিকার হয়েছিল সে কথা কেউ প্রচার করেনি, বলেনি। সবাই শিশুটির গুলিবিদ্ধের ঘটনাই প্রচার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় লিটন প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য গুলি করতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ সেই কথা তখন প্রচার করা হয়নি। ফলে তার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাতজন এমপিকে হত্যা করা হয়। পরে রানিং এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকেও হত্যা করা হয়। এবার লিটনকে হত্যা করা হলো। কাজেই ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত নতুন কিছু নয়। এদিকে বৈঠকে তিনটি আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এগুলো হচ্ছে— সামরিক শাসনামলে করা হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৬; চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬ ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি আইন, ২০১৬। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক শাসনামলে করা হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইনটি উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করা হচ্ছে। তেমন পরিবর্তন নেই। শুধু এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন আগে পরিচালক। এখন তা করা হচ্ছে মহাপরিচালক। এ ছাড়া পরিচালনা পর্যদের গঠনও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। ২০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হবেন চেয়ারম্যন আর সচিব ভাইস চেয়ারম্যান। পরিচালনা পর্ষদের মনোনীত সদস্যরা দুই বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইমারতের নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, নির্মাণ উপকরণ শিল্প এবং মানববসতি-সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও পরিচালনা করে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, রাজশাহী ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনকে আধুনিক করা হয়েছে। এতে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় সিডিএ এলাকায় মহাপরিকল্পনা না মেনে জমি ব্যবহার করলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগে এই দণ্ডের পরিমাণ ছিল একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা, তারপর প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ স্থাপিত দেয়াল, সীমানা খুঁটি বা বাতি অপসারণ করলে ৫ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের আইনে ছিল মাত্র ২০০ টাকা। আর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তির পরও কোনো স্থাপনা বা স্থাপনার বিশেষ অংশ না সরালে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে থেকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছর জেল, ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর