মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নতুন বছরে দুই দলের রাজনীতি

দল গুছিয়ে দাবি আদায়ের চ্যালেঞ্জে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

দল গুছিয়ে দাবি আদায়ের চ্যালেঞ্জে বিএনপি

গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করা— নতুন বছরে বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে তার আগে দল গুছিয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়াও জরুরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

তাদের মতে, ২০১৬ সাল জুড়েই অনেক চেষ্টা করেও সংগঠনকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারেনি বিএনপি। মামলা-হামলা আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই ব্যস্ত ছিল দলটি। সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও। ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হলে বিএনপিকে নতুন বছরই দল পুরোপুরিভাবে গুছিয়ে প্রস্তুত হতে হবে। প্রয়োজনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি এখনো দলটাকে সুন্দরমতো গুছিয়ে তুলতে পারেনি। নতুন বছর এটা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিদায়ী বছরের ১৯ মার্চ কাউন্সিল হলেও দলটি এখনো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয়। কমিটি এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে। বিপুল জনসমর্থন থাকলেও বিএনপি তা কাজে লাগাতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে যা দেখা গেছে তাতে আমরা মনে করি, স্বাভাবিক নিয়মে ২০১৮ সালের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনের জন্যও বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘বিএনপি বেশ কয়েক বছর ধরেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। সামনের বছরও তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমি মনে করি, যত প্রতিকূল পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, বিএনপি নির্বাচনের পথে থাকবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এ জন্য তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের মনোবল বাড়াতে হবে। সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের বিকল্প শক্তি বিএনপি। এই দুটো দলের একটি নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকলে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ জন্য সরকারকেও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। এটা খুবই জরুরি। বিএনপির মতো বড় দলগুলো সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে। বিএনপিও নির্বাচনমুখী দল। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আমরা সবসময়ই প্রস্তুত।

একই ভাষায় কথা বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ দুটো। একটি হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। আরেকটি হলো জঙ্গিবাদ নির্মূূলে জাতীয় ঐকমত্য গঠন। এ নিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। আমি মনে করি, সত্যিকার অর্থে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে দেশে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। বিএনপি সূত্র বলছে, বিদায়ী বছরে সংগঠন, রাজনীতি ও আন্দোলন— কোনোটাই উল্লেখ করার মতো ছিল না বিএনপির। দাবি আদায়ে আন্দোলন করার মতো কোনো শক্তি দলটির হাতে ছিল না। হাতছাড়া করেছে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিও। দুর্বল সংগঠন নিয়েও নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বিএনপি। জেলা পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ চলছে ঢিমেতালে। গত ১৯ মার্চ কাউন্সিল করলেও জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অর্ধেকও শেষ করতে পারেনি দলটি। ঢাকা মহানগরসহ যুবদল-ছাত্রদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি। কাউন্সিল করলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঘোষণা করতে পারেনি উপ-কমিটি।

জানা যায়, এ পর্যন্ত ২২টির মতো জেলায় কমিটি দিতে পেরেছে দলটি। যদিও সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। তবে ঘোষিত কমিটির বড় অংশই আংশিক কিংবা আহ্বায়কনির্ভর। ১৯ মার্চ কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর কেন্দ্রীয় ‘ঢাউস’ কমিটি হলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মতো ছিল না। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নানা নির্যাতন নিপীড়নসহ বৈরী পরিস্থিতিতে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। আশা করছি, জানুয়ারির মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর কমিটি হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বেশ তত্পর বিএনপি। দলটি আশা করছে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার। এক্ষেত্রে সব দলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ কার্যকর ও অর্থবহ হবে বলেও আশাবাদী বিএনপি। এ নিয়ে প্রয়োজনে দ্বিতীয় দফায় সংলাপে বসতেও প্রস্তুত বেগম জিয়া। রাষ্ট্রপতির সংলাপের ফলাফল দেখেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন। সেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে কারা থাকবেন তার একটি রূপরেখা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর