শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিয়ানমার পুলিশের হাতে নির্মম রোহিঙ্গা নির্যাতন

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিও

প্রতিদিন ডেস্ক

সারি বেঁধে বসে আছে কয়েক শ গ্রামবাসী। চারপাশে কঠোর পুলিশি প্রহরা। এর মাঝে আরও দুজন মানুষকে লাথি মারতে মারতে আনা হচ্ছে বসে থাকা লোকজনের সারিতে। এরপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা বসে থাকা লোকজনকে পেটাতে শুরু করলেন। আরেক কর্মকর্তা মুখে লাথি মারা শুরু করেন নির্দয়ভাবে। কোনো কাকুতি-মিনতি সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের নরম করতে পারছে না। তাদের অত্যাচার বেড়েই চলে। ঘটনাটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের। যাদের ওপর অত্যাচার      করা হচ্ছে তারা রোহিঙ্গা মুসলিম। আর এ অত্যাচার চালায় সে দেশেরই পুলিশ। গত নভেম্বরের এ অত্যাচারের ছবি ফাঁস হয়েছে সম্প্রতি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের এই ভিডিও করেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ভিডিওটি ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেশ তোলপাড় শুরু হয়। আর প্রথমবারের মতো সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নিপীড়নের এক ভিডিও আমলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত নিপীড়নের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে আসা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশি নির্যাতনের সেই ভিডিওটি তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল মিয়ানমার সরকারের এক বিবৃতিতে আটকের খবরটি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভিডিওটিতে যাদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে, তাদের আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় যারা গ্রামবাসীকে নির্যাতন করেছিল, তাদের ধরতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হচ্ছে।’ এর আগে রাখাইন প্রদেশের কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আইন ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিয়ানমার সরকার ৯ অক্টোবর মংডু সীমান্ত চৌকিতে সশস্ত্রদের হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। শুরু থেকেই নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দেশটির দ্বি-ফ্যাক্টো ক্ষমতার প্রতিনিধি অং সান সু চির সরকার ও সেনাবাহিনী। জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে রাখাইন রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৮৬। এখন পর্যন্ত ঘরহারা হয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মরতে হচ্ছে তাদের। মিয়ানমারে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ও জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া পরিচালনার অভিযোগ তুললেও ক্ষমতাসীন সরকারের নেতা অং সান সু চি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে এবার খোদ একজন পুলিশ সদস্যের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর টনক নড়েছে মিয়ানমার ও অং সান সু চির।

মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এ বছরই : মিয়ানমারে এখন চলছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতন। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতিদিন নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এমনই সময়ে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি বলেছেন, চলতি বছরই দেশটি স্থায়ী শান্তি অর্জন করবে। তিনি এ ব্যাপারে তার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রবিবার দেশটির রাজধানী নেপিডোয় ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অ্যান্ড পিস সেন্টারের (এনআরপিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আসছে বছরই সফল হবে। সু চি বলেন, ‘এই ভবন থেকেই শান্তির লক্ষ্যে আমরা আমাদের  দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে  সেগুলো মোকাবিলা করব। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বে আমাদের প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’ প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের সঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের দাঙ্গা শুরু হয়। ভয়াবহ ওই দাঙ্গা এবং পরের কয়েকটি দাঙ্গায় ১ লাখ ২৫ হাজার  রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন।

এরপর থেকে দেশটিতে নিয়মিত বিরতিতে  রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চলছে। বিষয়টি নিয়ে সু চির নীরবতায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরা রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। ফলে নিজ দেশে অনেকটা পরবাসী রোহিঙ্গারা। এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর