বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হলুদ সাংবাদিকতা ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে বিনিয়োগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

হলুদ সাংবাদিকতা ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে বিনিয়োগে

ওয়ান-ইলেভেনে শুরু হওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। দেশের বিনিয়োগব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে নানাভাবে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ মিডিয়া হাউস ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সমানে অপসাংবাদিকতা করে চলেছে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিজের মিডিয়ায় মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরে হয়রানির চেষ্টা করছে। কুৎসাচার চালানোর জন্য নিজেদের সংবাদমাধ্যম অন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবহার— এই ‘হলুদ সাংবাদিকতা’কে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, সংবাদমাধ্যম হলো সাধারণ মানুষের সত্য তথ্য জানার একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। সেই গণমাধ্যমে দেশের স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচারের অধিকার নেই। এতে পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ। নিরুৎসাহিত করছে বিনিয়োগ পরিবেশ। সমাজে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতেই এমন অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ওয়ান-ইলেভেনে ব্যবসায়ীদের টার্গেট করা হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। তখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন বিনিয়োগ থেকে। একইভাবে এখন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়াবেন। নতুন বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মঙ্গলবার একটি দৈনিক পত্রিকায় কাল্পনিক অভিযোগ তুলে অন্য একটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়। এতে আক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলা হয় যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অভিযোগ রয়েছে, পত্রিকাটি প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতা প্রয়োগে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করে। জানা গেছে, পত্রিকাটি তার মালিকপক্ষের ব্যবসায়িক স্বার্থ যেখানেই হানি হয়েছে সেখানেই আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত হচ্ছে। এর আগে সরকারের পাওনা রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ নেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাটি। এর ফলে মানহানিকর খবর প্রকাশের অভিযোগ এনে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান। মামলার অভিযোগে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে ‘হলুদ সাংবাদিকতার’ মাধ্যমে রাজস্ব বোর্ডকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে দাবি করে ভবিষ্যতে যেন এ রকম ‘ভুয়া খবর’ প্রকাশ না করা হয় সেজন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

হলুদ সাংবাদিকতার শিকার দেশের অনেক নিরীহ মানুষও। সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। আবার দেশের অনেক সম্পদশালী অসাধু ব্যক্তিও সমাজে নিজেদের প্রভাব বিস্তার কিংবা অন্য কোনো সুবিধা আদায় করতে অনেক সময় ‘মিডিয়া হাউস’ বানিয়ে ফায়দা লুটছেন। কর্মীদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য ব্যবসায়ীকে ঘায়েল করতে নিজের তৈরি মিডিয়ায় মুখরোচক ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করাচ্ছেন। কখনো বা কিছুটা সত্যের সঙ্গে অনেক মিথ্যা তথ্য মিশিয়ে মুখরোচক গল্পও ছাপানো হচ্ছে। পুলিশ বা প্রশাসনের অনেকে আবার পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার ভয়ে ওইসব সংবাদের সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে উল্টো যার নামে রিপোর্ট হয় তাকেই চেপে ধরেন। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতার কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সৎ ব্যবসায়ীরা, যারা দেশের অর্থনীতির প্রাণ। কেউ কেউ বিনিয়োগ থেকেও পিছিয়ে যাচ্ছেন এমন পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে। হলুদ সাংবাদিকতায় এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সংগত কারণেই ওই ধরনের মিডিয়া হাউসের সম্পদশালী মালিক কিংবা সাংবাদিক নামধারীদের শাস্তি দাবি করেছেন দেশের ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মফিজুর রহমান সম্প্রতি বলেছেন, যারা মিডিয়া হাউস খুলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফায়দা লোটে, সম্মান নষ্ট করে, অর্থনীতিতে বিনিয়োগ থেকে দূরে রাখে তারা দেশের শত্রু। এ ছাড়া যারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বা প্রকাশ করে চাঁদা নেন বা সুবিধা নেন তারা আসলে সাংবাদিকই নন। আবার অর্থের লোভে যারা মানুষকে বিপদে ফেলেন, তারাও সাংবাদিক নন। এদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এতে সমাজে শান্তি আসবে। দেশ উপকৃত হবে।

জানা গেছে, সাংবাদিকদের আয়ে স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। সাংবাদিক পরিচয়ে অন্যদের জিম্মি করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকা কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আয়কর রিটার্নের তথ্যে অর্থাৎ স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণসহ আয়-ব্যয়ের হিসাবে অসামঞ্জস্য থাকায় ২৭ সাংবাদিককে তলব করা হয়। এদের কাছে প্রকৃত আয়-ব্যয়ের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য গোপন করার কারণও ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। সাংবাদিকতার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে এখন।

সর্বশেষ খবর