শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

’৭১-এর সম্পর্ক চায় রাশিয়া

পুতিনকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে এমনভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী যে সম্পর্ক ১৯৭১ সালে দেশ দুটির মধ্যকার দৃঢ়বিশ্বাস ও আস্থার সমপর্যায়ের হবে। আর এ সম্পর্কটি রচিত হবে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক চুক্তির ভিত্তিতে। দুই পক্ষ এরই মধ্যে এ ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও একাধিক চুক্তির সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে। জানা গেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করতে চাইছে রাশিয়া। ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য এস্টাবলিশম্যান্ট অব ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিশন অব ট্রেড, ইকোনমিক অ্যান্ড সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য রাশিয়ান ফেডারেশন’ শীর্ষক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে রাশিয়া ও বাংলাদেশ         একে অন্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয় ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ  করতে পারবে। গত অক্টোবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় দুই পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য রাশিয়ার ফার্স্ট ডেপুটি মিনিস্টার ফর ইকনোমিক ডেভেলপমেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ব্লু ইকোনমি ও মেরিটাইম : বঙ্গোপসাগরে নির্দিষ্ট সীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার অর্জিত হওয়ার পর এখন ব্লু ইকোনমি সহায়তা ও মেরিটাইম চুক্তিরও প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে এরই মধ্যে চুক্তির একটি খসড়া পাঠিয়েছে দেশটি। ‘বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অন কো-অপারেশন ইন দ্য ফিল্ড অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট’ শীর্ষক এ চুক্তি কার্যকর হলে যুদ্ধজাহাজ এবং সরকারের অবাণিজ্যিক কার্যক্রমে পরিচালিত জাহাজ, প্রমোদতরী ও ক্রীড়া নৌযান ছাড়া রাশিয়ার সব ধরনের জাহাজ বঙ্গোপসাগরে ঢুকতে পারবে। জাহাজগুলো বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পাবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশও রাশিয়ায় একই ধরনের সুবিধা লাভ করবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাশিয়া ছাড়া আরও কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে মেরিটাইম সহায়তার বিষয়ে চুক্তির প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবিত চুক্তির সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গম রপ্তানির ট্রানজিট পয়েন্ট : আর্থিক খাতে সম্পর্ক ছাড়াও রাশিয়া চাইছে বাংলাদেশের মাধ্যমে তার দেশের খাদ্যপণ্য বহির্বিশ্বে রপ্তানি করতে। এ বিষয়েও আরও একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের খাদ্য অধিদফতরের সঙ্গে রাশিয়ান জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ‘ভিও প্রডিনট্রগ’-এর গম রপ্তানিবিষয়ক একটি চুক্তি করার অনুরোধ জানিয়েছেন। জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে ২৬ অক্টোবর খাদ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়। রাশিয়া থেকে গম এনে তৃতীয় দেশে রপ্তানির সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে যৌথভাবে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। খাদ্য বিভাগ জানাচ্ছে, এ মুহূর্তে খাদ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা নিরূপণসাপেক্ষে রাশিয়া থেকে গম আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

ঢাকায় আসবেন পুতিন : রুশ-বাংলা ঐতিহাসিক সম্পর্কের পুনরুত্থান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত। ওই বৈঠকে তিনি তার দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের যে কোনো একটি ভিভিআইপি সফর অনুষ্ঠান হতে পারে বলে ঢাকাকে অবহিত করেন। পরে রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে আমন্ত্রণের পক্ষে মত দেন।

সরাসরি ব্যাংকিং সম্পর্ক : রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করার বিষয়ে গত বছরে অনুষ্ঠিত আসেম সম্মেলনে সাইডলাইন বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ। ওই বৈঠকে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ এবং সরাসরি দুই দেশের ব্যাংকিং সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। তবে রাশিয়ার প্রথম সারির ব্যাংকগুলোর ওপর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলের (ওএফএসি) নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

 এখন এ বিষয়টির সমাধানে দুই দেশের আন্তমন্ত্রণালয় সফরের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির (বিইএ) সহসভাপতি এ এফ মুজতাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহযোগিতা চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলা-রুশ মৈত্রীর নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিকামী বাঙালির পাশে অবস্থান নিয়েছিল রাশিয়া অর্থাৎ তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্বাধীনতার পর রাশিয়ার নৌবাহিনীর সৈনিক ও বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচলে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। সেই সময়কার বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা থেকে এখন রাশিয়া বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলেই মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সর্বশেষ খবর