বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দুদকের চিঠি

সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সন্ধান

রুহুল আমিন রাসেল

এবার সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির সন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান। চিঠিতে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতকে ‘ধূসর ক্ষেত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের দাবি, বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হলে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে। দুদকের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া, জনবল নিয়োগ, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর ও সংস্থার ক্রয় প্রক্রিয়া, জনবল নিয়োগ, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ধূসর এলাকাসমূহ (গ্রে এরিয়া) চিহ্নিত করে প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিংয়ের তাগিদ দিয়ে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি আধাসরকারি পত্র দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ পত্রের আলোকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সম্প্রতি আরেকটি পত্র প্রেরণ করেন সব সচিবকে।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদকে দেওয়া চিঠির পর এখনো কোনো ফিডব্যাক পাইনি। এই ফিডব্যাক পাওয়ার পর তা পর্যলোচনা করে দেখবে দুদক। তবে পাব বলে আশা করছি।’ তিনি দুর্নীতির ধূসর এলাকাসমূহ প্রসঙ্গে বলেন, নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে কাজ হলে মানুষ টাকা (ঘুষ) দেবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি সব সচিব, কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে দুদকের চিঠিসহ আরেকটি পত্র দিয়েছি। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা দুদক প্রত্যাশিত বায়নে প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেবেন।’ সরকারের সব সচিবকে পাঠানো আধাসরকারি পত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব উল্লেখ করেন, ‘দুর্নীতি জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক হওয়ায় দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে এখনো পৌঁছায়নি। বর্তমান সরকার দুর্নীতি দমনে বদ্ধপরিকর। তাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া, জনবল নিয়োগ, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রকোপ থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের দুর্নীতির ধূসর এলাকাসমূহ শনাক্তকরণের উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।’ চিঠিতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের যে কোনো পদক্ষেপে দুদক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব আরও বলেন, দুদক, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের যৌথ প্রয়াসে দুর্নীতির মূলোৎপাটন হবে। এর আগে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তার আধাসরকারি পত্রে উল্লেখ করেন, দুদক দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতরে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সুষ্ঠু পরিচালনার মধ্য দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হলে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে। দুর্নীতি রোধ করা গেলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান গতিশীলতা পাবে। কাজেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের চলমান ভূমিকা আরও বাড়ানো আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে প্রো-অ্যাকটিভ মনিটরিংয়ের উদ্যোগে সহযোগিতা করতে আগ্রহী দুদক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর