সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাজনীতিতে সুরঞ্জিত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনীতিতে সুরঞ্জিত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি আমাদের জাতীয় সংসদের একজন ভালো ও নিয়মিত পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন। আসলে পার্লামেন্টারিয়ান কিন্তু সবাই হন না। ব্রিটেনসহ অনেক দেশেই আমরা দেখেছি- সেসব দেশের সব মন্ত্রী-এমপি পার্লামেন্টারিয়ান হননি। জাতীয় সংসদে তাত্ক্ষণিকভাবে কারও বক্তব্যের জবাব দেওয়ার মতো মেধা ও প্রতিভা দুটোই তার ছিল। সুরঞ্জিত বাবুর এই শূন্যতা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনুভূত হবে। গতকাল রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সরাসরি প্রচারিত ‘জনতন্ত্র গণতন্ত্র’ নামক অনুষ্ঠানে সদ্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের দীর্ঘ কর্মজীবনের ওপর এভাবেই স্মৃতিচারণ করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তারা ছিলেন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও বন্ধু।  এ সময় স্টুডিওতে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে আমরা সুরঞ্জিত সেনের মতো একজন বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানের শূন্যতা উপলব্ধি করব। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে ব্যক্তিগতভাবে আমি শোকাহত। তার সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় ৫০ বছরের। আমাদের মাঝে রাজনৈতিক মতভেদ ছিল। কিন্তু বন্ধুত্ব কখনই নষ্ট হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশের রাজনীতিতে একটি অনন্য অবদান রেখে গেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তারপর ’৭২ এর সংবিধান প্রণয়নের সময় তিনি সে কমিটির একজন সদস্য ছিলেন। সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে একাদশ ও দ্বাদশ সংবিধান সংশোধনীর সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। একাদশ সংশোধনীতে ছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকারের বৈধতা প্রদান এবং দ্বাদশ সংশোধনীতে ছিল- দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন। যদিও তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তারপরও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবদান ছিল অনন্য। অবশ্য ’৭০ সালে নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নেননি। তখন তিনি গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তারপর আওয়ামী লীগে অংশ নিয়েও নির্বাচন করেন এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন। তবে সরকারি দলে থেকেও তিনি অনেক সময় সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতাদের সমালোচনা করেছেন। এ জন্য তাকে অনেক সময় বিপদেও পড়তে হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতের মিল না থাকলেও তার বাইরে আমাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। সংসদে তিনি আমার প্রায় প্রতিটি বক্তব্যেরই জবাব দিয়েছেন এবং সেগুলো ছিল তথ্যভিত্তিক।  সংসদে তার বক্তৃতায় আমার সঙ্গে কখনো তিক্ততার সৃষ্টি হয়নি। সংসদের ভিতরে বিতর্ক করে বাইরে এসে একসঙ্গে চা খেয়েছি। বর্তমান সংসদ নিয়ে তিনি কিছুটা হতাশ ছিলেন। কারণ সত্যিকার বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেটা এখন নেই। যে বিতর্ক হওয়ার কথা, বিরোধী দলের প্রশ্নের জবাব দেবেন সেরকম কিছুই হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর